শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৩ বার
বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই’ ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক । আজকের খবর অনলাইন

রাজধানী ঢাকার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা মূলত বাস রুট পারমিট নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর ফলাফল। ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) সভায় নতুন ২২টি রুটে ১৯টি বাস কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে উঠেছে নানা প্রশ্ন ও আপত্তি। তবে এই আপত্তি যেন কানে তুলছে না প্রভাবশালী বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

আরটিসির অধীনে থাকা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, বিআরটিএ এবং ডিটিসিএ কর্মকর্তারা যখন একের পর এক আপত্তি জানাচ্ছেন—বাসের অপ্রয়োজনীয় রুট, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অপ্রাসঙ্গিক দূরত্ব, পূর্ব থেকে চলমান কোম্পানির সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব—সেই মুহূর্তে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্যরা সেই আপত্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে এগিয়ে নিতে চাইছেন নিজেদের প্রস্তাবিত রুট পরিকল্পনা।

বিশেষ করে বেশ কিছু প্রস্তাবিত রুট রয়েছে যা ৪০ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ৯৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ ঢাকা শহরের জন্য আরটিসির প্রচলিত নীতিমালায় বলা রয়েছে, মিনিবাস চলাচলের জন্য সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রুট অনুমোদনযোগ্য। তবে বাস্তবতা হলো, ইউনাইটেড সার্ভিস, ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ, আজমেরী গ্লোরি, অভিজাত ট্রান্সপোর্ট ও চ্যালেঞ্জার লাইনের মতো সংস্থাগুলো তার অনেকটাই ছাড়িয়ে যাওয়ার আবেদন করেছে। এই দীর্ঘ রুট পরিচালনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, আরটিসির প্রভাবশালী সদস্যদের ইচ্ছার কাছে সেই আপত্তি কার্যত ধোপে টিকছে না।

একইভাবে, কিছু বাস কোম্পানি পূর্বাচলের মতো এলাকায় রুট পারমিট চেয়ে আবেদন করলেও, ওইসব এলাকায় বাস চালানোর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ—যেমন রাজউকের অনুমোদন—নেই। ফলে সেসব আবেদনে জটিলতা আরও বেড়েছে। তবুও কোনো সমন্বয় ছাড়াই এইসব বিষয়গুলো সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে চলেছে, যা নগর পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে, এসি বাস ভাড়ার ক্ষেত্রেও চলছে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা। বিআরটিএ এখনো এসি বাসের জন্য নির্ধারিত ভাড়া নির্ধারণ করতে পারেনি। ফলে পরিবহন সংস্থাগুলো নিজ নিজ ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে। একদিকে গুলিস্তান থেকে বসুন্ধরার মতো অল্প দূরত্বে যেতে যাত্রীর খরচ ৩০ টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে ৯০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। ফলে যাত্রীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতাও বেড়ে চলেছে।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এ রকম সংকটপূর্ণ ও বিতর্কিত আবেদনের মাঝেও আরটিসি সভায় রুট পারমিট প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। অথচ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রুট পারমিট স্থগিত রাখতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে সভা ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া চলছে, যা ভবিষ্যতে পরিবহন নৈরাজ্য আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডিটিসিএ নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার এবং বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াছীন তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেও দ্বন্দ্ব বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাও এ বিষয়ে নীরবতা পালন করছেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম অবশ্য নতুন রুট আবেদনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন, যাত্রী চাহিদার কথা তুলে ধরে। তবে বাস্তবতা হলো, পূর্ব পরিকল্পনা এবং বিদ্যমান পরিবহন নীতিমালা উপেক্ষা করে এমন আবেদনের অনুমোদন শুধু যাত্রীসেবা নয়, শহরের চলমান যানজট ও পরিবহন বিশৃঙ্খলাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী সমন্বয় এবং স্বচ্ছ নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া ছাড়া নতুন রুট অনুমোদনের উদ্যোগ ঢাকা শহরের পরিবহন সমস্যাকে আরও দীর্ঘস্থায়ী ও দুর্বিষহ করে তুলবে। সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে রাজনীতি ও প্রভাবমুক্ত একটি আধুনিক আরটিসি গঠন এবং বাস্তবতা নির্ভর রুট পুনর্বিন্যাস এখন সময়ের দাবি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫