প্রকাশ: ২রা জুলাই, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে নতুন এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত তৈরি হলো—মাত্র এক দিনের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী হলেন সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত। সাংবিধানিক জটিলতা ও কূটনৈতিক বিতর্কের জেরে প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার পদ সাময়িকভাবে স্থগিত হলে উপপ্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনরত সুরিয়ার কাঁধে সাময়িকভাবে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বভার অর্পণ করা হয়। তবে এই দায়িত্ব ছিল অত্যন্ত স্বল্পমেয়াদি—মাত্র ২৪ ঘণ্টা। বুধবার (২ জুলাই) শুরু হওয়া এই ‘প্রধানমন্ত্রীত্ব’ আজকের রাতেই শেষ হচ্ছে।
অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরদিন সকালে ব্যাংককে আয়োজিত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯৩তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সুরিয়া। ঐতিহাসিক এ আয়োজনে তার উপস্থিতি আনুষ্ঠানিকতা ও বাস্তবতার এক ভিন্ন মাত্রা তৈরি করে। ৯৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে যে কার্যালয়ে তিনি বসেছেন, সেখানে তিনি দায়িত্ব পালন করলেন না এমনকি ৯৩ ঘণ্টাও। এই বাস্তবতাই সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত করে তাকে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে সুরিয়া তার সংক্ষিপ্ত মেয়াদ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও জানান, তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো একটি চূড়ান্ত কাগজে স্বাক্ষর করা—যার মাধ্যমে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) তার উত্তরসূরি ফুমথাম উইচায়াচাইয়ের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব হবে। এটিই তার দায়িত্ব পালনের ‘মূল লক্ষ্য’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
থাই রাজনীতিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত বরাবরই পরিচিত ছিলেন একজন ‘চতুর, সুযোগসন্ধানী ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক’ হিসেবে, যিনি রাজনৈতিক বাতাসের গতি বোঝার ক্ষেত্রে সিদ্ধহস্ত এবং সবসময় ক্ষমতাসীন দলের আনুগত্য প্রদর্শনে পেছপা হন না। তার এই এক দিনের দায়িত্বগ্রহণ অনেকটা প্রতীকী হলেও, তা থাই রাজনীতির গতিশীল এবং অস্থির প্রকৃতিকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নের পদ সাময়িকভাবে স্থগিত হওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু বিতর্কিত কূটনৈতিক মন্তব্য ও রাজনৈতিক আচরণ। থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালতের মতে, কম্বোডিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনে তিনি মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত নৈতিকতার মানদণ্ড লঙ্ঘন করেছেন—এমন ‘যথেষ্ট ভিত্তি’ রয়েছে। কিন্তু ঘটনা আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়, যেখানে পেতংতার্ন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন এবং একজন থাই সামরিক কর্মকর্তার প্রতি তীব্র সমালোচনা করেন। এই অডিও ফাঁসের পর জনমনে অসন্তোষ দানা বাঁধে এবং তার পদত্যাগের দাবিও উঠে আসে।
এরই প্রেক্ষিতে, সুরিয়ার স্বল্পমেয়াদী দায়িত্ব গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন ফেউ থাই পার্টি ঘোষণা করে, নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমথাম উইচায়াচাই। তাকে নতুন সহকারী প্রধানমন্ত্রী পদেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা পদমর্যাদায় উপপ্রধানমন্ত্রীর চেয়েও উচ্চতর।
এমন এক দিনে থাই রাজনীতিতে যে রকম নাটকীয়তা ও প্রতীকী স্থানান্তর ঘটেছে, তা ইতিহাসে বিরল। বিশ্বরাজনীতিতে এমন সংক্ষিপ্ত মেয়াদের প্রধানমন্ত্রীত্ব অত্যন্ত কমই দেখা যায়। সাধারণত অন্তর্বর্তী সময়ের এই ধরনের দায়ভার শুধু আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই বিবেচিত হয়, তবে এক দিনের এ দায়িত্ব পালনে সুরিয়া কোনো চমক রাখেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে।
আপাতত, এই এক দিনের ‘নেতৃত্ব’ হয়ে থাকল থাই রাজনীতির এক ব্যতিক্রমী অধ্যায়, যেখানে বাস্তবতা, আনুষ্ঠানিকতা ও প্রতীকের অদ্ভুত সংমিশ্রণ মিলেছে সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিতের সংক্ষিপ্ত প্রধানমন্ত্রিত্বের মধ্য দিয়ে।