শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

তারহীন বিদ্যুৎ প্রযুক্তির যুগে পদার্পণ: লেজারে ভর করে বদলে যেতে পারে বিশ্ব সভ্যতা

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫
  • ৪৮ বার

প্রকাশ: ২রা জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

একটা সময় ছিল, যখন বিদ্যুৎ মানেই ছিল তারে বাধা—সংযোগ, লাইন, ট্রান্সমিশন টাওয়ার। কিন্তু আজ, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞান তার গণ্ডি ভেঙে দিয়েছে। মার্কিন সামরিক গবেষণা সংস্থা ডার্পা (DARPA) এক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে: তারা ৮০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ৫.৩ মাইল বা ৮.৬ কিলোমিটার দূরত্বে সফলভাবে প্রেরণ করেছে কেবলমাত্র লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে। বিদ্যুতের ইতিহাসে এটি এক অনন্য মাইলফলক।

জুন ২০২৫-এর শেষে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষাটি মাত্র ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হলেও, এর প্রভাব হতে পারে বহু দশকব্যাপী। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজার বিম নির্দিষ্ট রিসিভারে প্রক্ষেপণ করে, তারা ১ মেগাজুলেরও বেশি শক্তি স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে। এই কীর্তি আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে।

এটি শুধু একটি প্রমাণ নয় যে প্রযুক্তিগতভাবে এটা সম্ভব, বরং এটি সেই বাস্তবতার দিকে বড় এক ধাপ—যেখানে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়বে তারহীনভাবে, আকাশে, মরুভূমিতে, সাগরের মাঝে বা দুর্যোগে বিপর্যস্ত জনপদে।

এই কৌশলের মৌলিক ধারণা সরল—উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজার বিম নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে বিদ্যুৎ ‘বহন’ করবে এবং রিসিভার সেটি ধরবে ফোটোভোলটাইক বা অন্য কোন এনার্জি-রিসিভিং পদ্ধতির মাধ্যমে। তবে এর প্রযুক্তিগত বাস্তবায়ন অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও জটিল। নিরাপত্তা, নিখুঁত লক্ষ্যভেদ এবং রিসিভারের সক্ষমতা—সবকিছুর ওপর নির্ভর করে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা।

এই গবেষণা সামরিক প্রয়োজনে শুরু হলেও, এখন প্রশ্ন জেগেছে: সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও কি এই তারবিহীন বিদ্যুৎ সঞ্চালন বিপ্লব ঘটাতে পারে?

এর উত্তর খোঁজার আগে একটু কল্পনা করি—আপনার বাড়ির ছাদে কোন সোলার প্যানেল নেই, বিদ্যুৎ লাইনের কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু আপনার ফ্রিজ, ওয়াই-ফাই, এসি সবই চলছে… কীভাবে? কারণ দূরে কোথাও একটি পাওয়ার হাব থেকে আপনি লেজার মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।

এমন প্রযুক্তি বাস্তবায়িত হলে, দুর্গম পাহাড়, দ্বীপ, কিংবা সড়কবিহীন অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবনে ঘটবে এক আশ্চর্য পরিবর্তন। যেখানে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছাতে খরচ হয় কোটি কোটি টাকা, সেখানে একটি নির্ভরযোগ্য লেজার সিস্টেম হতে পারে টেকসই সমাধান।

দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে এই প্রযুক্তি হতে পারে যুগান্তকারী। ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের পরে যখন বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন আকাশপথে এই ধরনের বিদ্যুৎ প্রেরণ ব্যবস্থা হতে পারে তাৎক্ষণিক পুনঃসংযোগের উপায়। শুধুমাত্র একটি চলমান পাওয়ার ট্রান্সমিটার ড্রোনই যথেষ্ট হবে।

বাজারে এখনই দেখা যাচ্ছে, কিভাবে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রযুক্তির মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে আগ্রহী হচ্ছে। কল্পনা করুন, আপনি মেট্রোরেলে বসে আছেন, আর আপনার ফোনটি চার্জ হচ্ছে শুধু ট্রেনের ছাদের একটি লেজার এমিটার থেকে।

গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই গবেষণা শুরু করেছে কীভাবে ইলেকট্রিক গাড়িকে চলন্ত অবস্থায় চার্জ দেওয়া যায় লেজার সিগনাল ব্যবহার করে। ভবিষ্যতের মহাসড়কগুলোতে হয়তো থাকবে সারি সারি এনার্জি ট্রান্সমিটিং ইউনিট, যেখানে তারহীনভাবে গাড়িগুলো চার্জ হবে।

তবে এই প্রযুক্তি নিয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্বেগও—নিরাপত্তা, মানবদেহে লেজার বিকিরণের সম্ভাব্য ক্ষতি, আবহাওয়াজনিত বাধা এবং বৈধ নিয়ন্ত্রণ। একটি ভুল দিক বরাবর প্রেরিত শক্তিশালী লেজার বিম বড় দুর্ঘটনার কারণও হতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হওয়ার আগে দরকার কঠোর নিরাপত্তা প্রটোকল ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড।

এছাড়া, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়, নতুন আইন প্রণয়ন ও আন্তর্জাতিক জোট গঠন—এসব কিছুই এই প্রযুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে বাধ্যতামূলক হয়ে উঠবে।

তবুও, যত বাধাই থাকুক, প্রযুক্তির অগ্রগতি থেমে থাকে না। যেভাবে মোবাইল ফোন একসময় তারের ফোনকে বিদায় জানিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই তারযুক্ত বিদ্যুৎ সংযোগকেও হয়তো বিদায় জানাতে চলেছে মানবসভ্যতা।

ডার্পার এই পরীক্ষার পর শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও এরকম গবেষণার গতি বাড়িয়েছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ দুর্গম অঞ্চল ও অফ-গ্রিড এলাকাগুলোতে সহজেই বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যাবে কম খরচে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও বিদ্যুৎখাতে নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়া এই লেজার-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে ২১শ শতকের অন্যতম যুগান্তকারী আবিষ্কার হতে চলেছে। যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে এটি শুধু প্রযুক্তিগত নয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে এক সম্পূর্ণ নতুন যুগের সূচনা করবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ব এখন দেখেছে—বিদ্যুৎ আর তারের মধ্যে আবদ্ধ নয়, বরং এখন তা আলোয় ভাসে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫