প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । আজকের খবর অনলাইন
দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের দুই পরাশক্তি—রিয়াল মাদ্রিদ ও প্যারিস সাঁ জার্মেই (পিএসজি)। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির বিখ্যাত মেটলাইফ স্টেডিয়ামে আজ রাতেই গড়াবে এই মহারণ। দুটি ক্লাবই ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হলেও আজকের এই লড়াই শুধুই ফাইনালে ওঠার নয়, বরং তার চেয়েও বেশি কিছু—পুনরায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ এবং পুরনো হারের প্রতিশোধ নেওয়ার এক উত্তপ্ত মঞ্চ।
এবারের ক্লাব বিশ্বকাপের নতুন ফরম্যাটে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে ৩২টি দল, আর সেই আসরের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপের দুটো হেভিওয়েট ক্লাব। ফ্রান্সের পিএসজি এবারের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করে এসেছে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকে। অন্যদিকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ইউরোপিয়ান ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ তাদের ঐতিহ্য, অভিজ্ঞতা এবং শিরোপার ভাণ্ডার নিয়ে বরাবরের মতোই ভয়ংকর এক প্রতিপক্ষ।
চলতি আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে পিএসজি জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে। ম্যাচে প্রতিপক্ষের আগ্রাসী ফুটবল ও রক্ষণভাগের চাপ সামলে জিততে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে লুইস এনরিকের শিষ্যদের। বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদের জয়টা ছিল কিছুটা নাটকীয়, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ৩-২ গোলের কষ্টার্জিত জয় তুলে নেয় কার্লো আনচেলত্তির দল। যদিও কাগজে-কলমে তুলনায় দুর্বল ছিল ডর্টমুন্ড, তবে মাঠে তারা রিয়ালকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করে।
দুই দলের মধ্যে দ্বৈরথের ইতিহাসও কম রোমাঞ্চকর নয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোতে দেখা হয়েছিল তাদের। দুই লেগ মিলিয়ে পিএসজিকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করেছিল রিয়াল। দ্বিতীয় লেগে এমবাপ্পের দুর্দান্ত শুরু, তারপর হঠাৎ করিম বেনজেমার হ্যাটট্রিক—যার মধ্যে দোন্নারুম্মার ভয়াবহ ভুল থেকে আসা একটি গোল আজও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ম্যাচটি হয়ে উঠেছিল বার্নাব্যুর আরেকটি ক্লাসিক রাত, যেখানে ফুটবল প্রেমীরা প্রত্যক্ষ করেন ইউরোপিয়ান রাজত্বের প্রকৃত রূপ।
এর আগেও ২০১৭-১৮ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল ও পিএসজি। তখনও একপাক্ষিক দাপট ছিল রোনালদো নেতৃত্বাধীন রিয়ালের। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ গোলে সহজেই জয় তুলে নেয় তারা। তবে একই টুর্নামেন্টের ২০১৯ সালের গ্রুপপর্বে পিএসজিও দেখিয়েছে শক্ত প্রতিপক্ষের পরিচয়—৩-০ গোলের জয়ে ঘরের মাঠে রিয়ালকে উড়িয়ে দেয়, বার্নাব্যুতে ২-২ ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেয় এবং গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়।
১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ইউরোপা কাপ ও কাপ উইনার্স কাপেও একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই ক্লাব। ১৯৯৩ সালের ঐতিহাসিক ম্যাচে রিয়াল প্রথম লেগে ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকলেও, দ্বিতীয় লেগে পিএসজির ৪-১ গোলের দুরন্ত প্রত্যাবর্তন আজও ইউরোপিয়ান ফুটবলের অন্যতম সেরা কামব্যাক হিসেবে ধরা হয়। সেই পিএসজি এখন অর্থ ও তারকায় সমৃদ্ধ, কাতারি মালিকানায় গড়া এই ক্লাব ইউরোপে এখন আর কেবল প্রতিযোগী নয়—একটি শিরোপাপ্রত্যাশী প্রতিষ্ঠান।
আজকের ম্যাচে তাই মুখোমুখি হচ্ছে দুই বিপরীত দর্শনের ক্লাব—একদিকে ঐতিহ্য, ট্রফির গ্ল্যামার ও ইউরোপিয়ান অভিজ্ঞতা; অন্যদিকে তারকার ঝলক ও আধুনিক কৌশলের ছাপ। রিয়াল যেখানে ফুটবলের গর্বিত ইতিহাস বহন করে, পিএসজি সেখানে বর্তমান সময়ের বাজারপ্রভুত্বের প্রতিচ্ছবি। দুই শিবিরেই রয়েছে তারকাদের মেলা—ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, বেলিংহ্যাম, রোড্রিগো বনাম এমবাপ্পে, উগার্তে, ওসমান ডেম্বেলের মতো খেলোয়াড়রা আজ মাঠে তুলবে এক যুগোপযোগী রণকৌশলের ঝড়।
উভয় দলের জন্য আজকের ম্যাচ শুধু এক ফাইনালের টিকিট নয়, বরং আত্মপ্রমাণ, ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শ্রেষ্ঠত্বের জানান দেওয়া এবং নিজেদের প্রকৃত শক্তি বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার সুযোগ। ক্লাব বিশ্বকাপের এই সেমিফাইনাল ম্যাচ তাই ফুটবলপ্রেমীদের কাছে হয়ে উঠেছে এক মহাযুদ্ধের প্রতীক্ষা।
কে হাসবে শেষ হাসি? ইতিহাস পুনরাবৃত্তি করবে রিয়াল, নাকি প্রতিশোধের মঞ্চে উল্লাস করবে পিএসজি? বিশ্ব ফুটবলের নজর আজ স্থির থাকবে মেটলাইফ স্টেডিয়ামের ৯০ মিনিটে।