শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৫ বার
জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই’ ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । আজকের খবর অনলাইন

আগামী ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য ‘জাতীয় সমাবেশ’কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৭ দফা দাবির অধীনে দেশব্যাপী বড় এই সমাবেশে লাখো নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সময় সময় বৈঠক করে প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করছেন। দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রভাব প্রদর্শনের লক্ষ্যে এই সমাবেশকে নির্বাচনী বার্তা হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।

জামায়াতের উদ্দেশ্য শুধু নিজেদের শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং বিএনপি সহ বিভিন্ন বাম, ডান এবং ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠনকে একত্রিত করে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি গঠন করা। দলটির নেতারা ইসলামি দলগুলোকে একত্রিত করার পাশাপাশি অমুসলিম ভোটারদেরও গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিগত সময়ে নানা কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়া জামায়াত গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে স্বতঃস্ফূর্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। সম্প্রতি দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে পুনরায় নিবন্ধন লাভ করেছে।

সমাবেশ থেকে প্রধানত আগামী জাতীয় নির্বাচন, বিচারব্যবস্থার সংস্কার ও প্রয়োজনীয় নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে। এছাড়া নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ইসলামি দলগুলোকে একত্রিত করার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাওয়া যেতে পারে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর এটি জামায়াতের সবচেয়ে বড় সমাবেশ বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটিকে নির্বাচনপূর্ব কৌশলগত একটি ধাপ হিসেবেও দেখছেন, যেখানে জনসমর্থনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে দলটি।

জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৭ দফা দাবি শুধুমাত্র দলীয় নয়, দেশের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের যুগান্তরকে জানান, ১৯ জুলাই দুপুর ২টায় সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। আহ্বায়ক অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে গঠিত বাস্তবায়ন কমিটি ও তার উপকমিটিগুলো নিয়মিত বৈঠক করে প্রস্তুতি চালাচ্ছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিতির জন্য তৎপরতা চলছে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সমস্ত অংশগ্রহণকারীকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

রাজধানীসহ আশপাশের জেলা ও মহানগর থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও সমাবেশের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সম্প্রতি জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এক সংলাপে বলেন, যদি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তাহলে তার দল আপত্তি করবে না, তবে নির্বাচনের পদ্ধতি সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত হওয়া প্রয়োজন। তিনি পিআর পদ্ধতির প্রচলনের পক্ষে কথা বলেন এবং স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চান।

সমাবেশের মঞ্চের আকার ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিয়ে দলীয় নেতারা ইতিমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেছেন। সেখানে ৩১ ফুট প্রস্থ ও ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্যের মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে, যা এলইডি প্রজেক্টর ও সিসিটিভি সুরক্ষা ব্যবস্থাসহ আধুনিকভাবে সাজানো হবে।

একই সঙ্গে জামায়াত ইসলামি দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনি সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও এখনও পূর্ণ ঐক্যে পৌঁছায়নি, কারণ ধর্মীয় ও নীতিগত নানা মতবিরোধ রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত প্রায় ৪৫ বছরে জামায়াতের সঙ্গে অন্য ইসলামি দলগুলো কখনো ঐক্য করতেছে না, কারণ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা রয়েছে। এবারও ঐক্যের ক্ষেত্রে এসব সমস্যার সমাধান ছাড়া সুফল পাওয়া কঠিন বলে ধারণা।

তবে জামায়াত ইতিমধ্যে বেশিরভাগ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য হলে কতটুকু ছাড় দেওয়া হবে এবং নেতৃত্ব গ্রহণ কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরই স্পষ্ট হবে। এমন পরিস্থিতিতে ঐক্য সফল হবে কিনা, তা সময়ের অপেক্ষা।

জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি তীব্র হচ্ছে। জামায়াতও এই প্রস্তুতিতে কোনো ধরনের শিথিলতা রাখছে না। তারা আসনভিত্তিক প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামী জাতীয় সমাবেশ জামায়াতের জন্য শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের শক্তি পুনঃস্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার এই সময়ে এই সমাবেশ থেকে যে বার্তাগুলো আসবে, তা বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫