প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ তাহের জাতীয় রাজনীতিতে আলোচিত ও বিতর্কিত বিএনপি’র অবস্থান ও মনোভাব নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তার ভাষ্য, বিএনপি এমন এক আত্মবিশ্বাস বা দম্ভে পৌঁছেছে যে, তারা আগেভাগেই ধরে নিচ্ছে এবার তারা আবার ক্ষমতায় যাবে এবং সেই ক্ষমতায় গিয়ে আগের মতোই দুর্নীতি ও অপকর্ম করবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে আয়োজিত একটি দোয়া মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। মাহফিলটি আয়োজন করা হয় ১৯৭৭ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে। রাজনৈতিক বাস্তবতা, নির্বাচন পদ্ধতি এবং সাম্প্রতিক সংলাপকে ঘিরে তার বক্তব্য ছিল একাধারে সমালোচনামূলক ও রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
ডা. তাহের বলেন, “আমরা দেখছি বিএনপি এমন এক অবস্থান নিচ্ছে, যেখানে তারা ভাবছে এই দেশ আবার তাদের হাতে যাবে এবং তারা পুরনো পথেই হাঁটবে। এটাই স্পষ্ট করছে—তাদের রাজনীতি এখনও জনস্বার্থের চেয়ে দলীয় সুবিধা ও প্রতিশোধমূলক আচরণে পরিচালিত।”
তিনি আরও বলেন, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয়, সেটা নিশ্চিত করাটা রাষ্ট্র ও নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, যদি এই নির্বাচন সংস্কারহীন হয়, যদি জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়, তাহলে দেশ গভীর সংকটে পড়বে, যা দেশের মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না। কেউ যেন এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না থাকেন।”
নির্বাচন পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বর্তমান ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ ব্যবস্থার পরিবর্তে ‘প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন’ (PR) বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতির প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, “দুটি দল ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দল পিআর সিস্টেমে নির্বাচনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই একমত হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে এবং জনগণের ভোট অধিকতর প্রতিনিধিত্বশীল রূপ পাবে।”
এ সময় তিনি ১৯৭৭ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে নিহতদের স্মরণ করেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে তখনকার রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাষ্ট্রীয় দমননীতি এবং শহীদ পরিবারগুলোর অব্যক্ত বেদনার কথা। তিনি বলেন, “শহীদদের রক্ত যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল, আজও তার উত্তর মেলেনি। আমরা সেই অন্যায়ের বিচার চাই। শহীদ পরিবারদের যথাযথ মর্যাদা ও তাদের মতামতকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ও তৃণমূল সংগঠকরা। তারা সবাই জুলাইয়ের ঘটনাবলিকে ইতিহাসের এক গাঢ় ট্র্যাজেডি হিসেবে উল্লেখ করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তারা আরও বলেন, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ ও একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশ সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
ডা. তাহেরের এই বক্তব্য শুধু বিএনপি বিরোধিতা নয়, বরং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংকট ও তা থেকে উত্তরণের বাস্তব পথনির্দেশ হিসেবে বিশ্লেষণ করছেন অনেকেই। বিএনপির প্রতি তার এই তীব্র ভাষার সমালোচনা রাজনীতির অঙ্গনে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে, তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে—এই বক্তব্য আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও জাতীয় সংলাপের ভাষ্যকে আরও জটিল করে তুলেছে।
অতএব, যখন দেশের রাজনীতি নির্বাচনমুখী হয়ে উঠছে এবং সব পক্ষের দৃষ্টিনিবদ্ধ ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের দিকে, তখন এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।