শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

যুক্তরাজ্যে কল্যাণ সংস্কার বিল পাসে বিপর্যয়: একটি রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও জনমতের জয়

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৬ বার

প্রকাশ: ২রা জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন

একবছর ধরে ক্ষমতায় থাকা লেবার সরকারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমার। তাঁর ‘ইউনিভার্সাল ক্রেডিট ও পার্সোনাল ইন্ডিপেনডেন্স পেমেন্ট (PIP)’ বিল সংসদে পাস হলো – তবে প্রচলিত ইউ-টার্ন সিরিজ ও অন্তর্দলীয় বিদ্রোহের কারণে এটি কার্যত একইসাথে এক জয়ও, এক পরাজয়ও।

মঙ্গলবার সংসদে দ্বিতীয় পাঠে বিলটি পাস হয় ৩৩৫ ভোটের বিপরীতে ২৬০ ভোটে, অর্থে ৭৫ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয় । তবে বিলের মূল উপাদান—PIP‑এর কাটছাঁট—সরাতে বাধ্য হয় সরকার, যা ছিল বিলের কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ। পরিবর্তে ঘোষণা করা হয় যে PIP‑এর নতুন যোগ্যতা মানদণ্ড নির্ধারণ করা হবে পর্যালোচনার (Timms রিভিউ) পর, যা আগামী শরতে ২০২৬ সালে প্রকাশ হবে

অন্তত ৪৯ জন লেবার এমপি এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন – যা স্টারমার সরকারের সবচেয়ে বড় অন্তর্দল প্রতিরোধ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। সরকারের নাটকীয় সুবিধাবঞ্চিততা দলের অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিপূর্ণভাবে স্তব্ধ করেছিল।

সামাজিক নিরাপত্তা ও প্রতিবন্ধী বিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন টিমস বিলের গুরুত্বপূর্ণ দফা (Clause 5) বাতিল ঘোষণা করেন ভোটের মাত্র পৗণঃসত্ত্বার ৯০ মিনিট আগে, যা কক্ষপথে বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল

আইএফএস (Institute for Fiscal Studies)-এর ডেপুটি ডিরেক্টর হেলেন মিলার স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, PIP‑এ কোনো সংস্কার না করা হলে, বিলটি আগামী চার বছরের মধ্যে কোনো সঞ্চয় করবে না; Universal Credit‑এর স্বাস্থ্য উপাদান হ্রাসের প্রত্যাশিত £1.7 বিলিয়ন সাশ্রয় কমবে UC স্ট্যান্ডার্ড ভাতা বৃদ্ধির কারণে

রেজোলিউশন ফাউন্ডেশন প্রধান রুথ কার্টিস বলছেন যে, বিল পেশ হলেও এখনও সাত বছরে নেট সঞ্চয় প্রায় শূন্যের কোঠায়, যা মধ্যমেয়াদে চ্যান্সেলরের আর্থিক পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা দিতে পারে

চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভসকে এখন অতিরিক্ত আয় উৎস খুঁজতে হবে—সংশোধিত পরিকল্পনায় প্রায় £2.5‑5 বিলিয়ন সাশ্রয়ের অভাব দেখা দিয়েছে

লেবার সরকারের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত মন্ত্রী লিজ কেন্ডালও নানা ইউ-টার্ন পরেও পদত্যাগের প্রশ্ন উড়িয়ে দেন বলেই জানাচ্ছেন, এবং এমপিদেরকে আশ্বস্ত করেন যে ওরা স্টারমারের নীতির সাথে এখনও ১০০% আছে

তবে বিরোধী দলের নেতারাও নীরব ছিলেন না। কনজারভেটিভ নেতা কেমি ব্যাডেনচ পাস হওয়া বিলকে ‘pointless’ ও ‘utter capitulation’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, আর রিফর্ম ইউকে নেতা নাইজেল ফ্যারাজ বলেন: “এই সরকার বড় সমস্যায়”

লিবারেল ডেম নেতৃ এড ডেভি মন্তব্য করেন: “এভাবে একটি দেশ পরিচালনা করা যায় না। ব্যর্থ বিল বাতিল করে আন্তঃদলীয়ভাবে কাজের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি”

গার্ডিয়ান সংবাদপত্র একটি সম্পাদকীয়তে এই ভুল সিদ্ধান্তকে কৌশলগত ইউ-টার্ন বলে উল্লেখ করেছে, যা সহানুভূতির জন্য নয়, বরং বিদ্রোহ প্রতিরোধের জন্যই নেওয়া হয়েছে; এতে ‘দ্বি-স্তর’ সুবিধাবঞ্চিততা সৃষ্টি হবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন

বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন এটি একটি Pyrrhic বিজয় – সরকার ভোটে জয়ী হয়েছে, কিন্তু নীতিগতভাবে বিজয়কে অকার্যকর করে রেখেছে। এ ধরনের সংশোধন শুধুমাত্র ক্ষণস্থায়ী সাশ্রয়ের জন্য, কিন্তু দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উপর বিরূপ চাপ বাড়াতে পারে

Guardian বিশ্লেষণে রাজনৈতিক দুর্বলতা, স্টারমারের নেতৃত্ব সকলেই দেখেছেন—”অহংকার”, নেতিবাচক Whip কৌশল এবং স্বচ্ছতা-বিহীন নীতি গ্রহণের ফলে লেবার পার্টির ভবিষ্যত লিটিগেশন ও ঐক্যের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে

কল্যাণ বিলের আৰ্থিক লক্ষ্য, জনদাবি এবং লেবার সরকারের সামাজিক নীতির মধ্যে এই সংঘর্ষ পরিপূর্ণ ভাবে প্রমাণ করে যে, যুক্তরাজ্যে কল্যাণ সংস্কারের জন্য শুধু বাজেট নয়—এটা নিপুণ রাজনৈতিক কৌশল, জনমত বোঝার ক্ষমতা এবং দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে।
এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে: যদিও ভোটে আয়োজিত জয় লাভ হলো, তা অধিকাংশ বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক ও নৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিকর। এতেই তবেেছে যে, লেবারের আর্থিক প্রেক্ষাপট গ্রহণযোগ্য হলেও, সামাজিক মানবিকতা চূড়ান্তভাবে পিছিয়ে গেছে।

শেষ পর্যন্ত এই বিল পাস হলেও, স্টারমার সরকারের রাজনৈতিক ও নৈতিক ভিত্তি যেন তার সঙ্গে বেশ কিছু ভাঙাচোড়া নিয়ে যাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫