শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

মৌমাছির হুলে মিলল জীবনের আশা: এলি লোবেলের লিম ডিজিজ থেকে মুক্তির বিস্ময়কর গল্প

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫
  • ২৬ বার

প্রকাশ: ২রা জুলাই ’২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

১৯৯৬ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিশ্রুতিশীল নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী এলি লোবেল টিক পোকার মাধ্যমে ভয়ানক লাইম ডিজিজে আক্রান্ত হন। তার চিকিৎসার যাত্রা দীর্ঘ হয় ক্লান্তিকর: সঠিক নির্ণয় মেলেনি বরং তিন বছরের একবন্দি যন্ত্রণার পর, প্রায় ১৫ বছর ধরে হুইলচেয়ারে কাটতে শুরু করে তার জীবন। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্যালিফোর্নিয়ার এক গ্রামে ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করবেন, জীবনের যুদ্ধে আর লড়াই করবেন না।

তখনই ঘটে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা: একটি মৌমাছির ঝাঁক তার ওপর হামলে পড়ে। এলির মনেই হয়েছিল, এবার বুঝি শেষ। কিন্তু শারীরিকভাবে ঘটে এক আশ্চর্য পরিবর্তন। একটি মৌমাছির হুলের কারণে শরীরে জ্বর ও ব্যথা বাড়তে থাকে – যা বিজ্ঞানিকভাবে পরিচিত জারিশ–হারজাইমার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। ত্রিশ ঘণ্টার মধ্যেই সেই প্রতিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হতে থাকে এবং মাত্র তিন দিনের মধ্যে এলির অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। মনোসংযোগ ফিরে আসে, স্মৃতিশক্তি ফিরে আসতে থাকে, এবং হাঁটতে সক্ষম হন তিনি

এ অভিজ্ঞতা থেকেই এলি নিজে গবেষণা করে জানতে পারেন যে মৌমাছির বিষে থাকা melittin নামক একটি পেপ্টাইড অনুভূমিক চিকিৎসায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাবে Borrelia burgdorferi ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম । এরপর তিনি নিজে দেহে প্রতিদিন নিয়ম করে মৌমাছির হুল প্রয়োগ করা শুরু করেন, একটি নির্ভুল ডোজ অনুসরণ করে—তিন বছরের বেশি অভিজ্ঞতা ও হাজারো হুল পরীক্ষার পর নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ ঘোষণা করেন এলি

পরবর্তীতে তিনি বী-ভেনম থেরাপি (Bee Venom Therapy, BVT) নামে একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন, যা আয়ত্তে নিয়ে তিনি নানা গবেষণায় লিপ্ত হন। কানেকটিকাটের ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাভেনে ড. সাপির গবেষণায় melittin অনেক ধরণের Borrelia ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হিসেবে preliminary ফলাফল দিয়েছে, যা এখনও প্রকাশিত হয়নি কিন্তু সম্ভবত খুবই প্রতিশ্রুতিশীল বলে বিবেচনা করা হচ্ছে

বিশ্বব্যাপী একটি বড় বিতর্ক রয়েছে: এখনও এই পদ্ধতি FDA অনুমোদিত নয়, এবং চিকিৎসাবিদরা বেশ সতর্ক—বিষ প্রয়োগে অ্যালার্জি, নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার বিষয়গুলো সমাধান হওয়া প্রয়োজন । তবে বিজ্ঞানীরা melittin দিয়ে HIV ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণ করার সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষণায় melittin HIV ভাইরাসের আবরণ ভেঙে ফেলে, যাতে ভাইরাস বাধ্য হয় প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে পাল্টায় না—অর্থাৎ এটি একটি envelope-busting কৌশল, যা গবেষকদের আশা নিয়ে দেখা হচ্ছে ভবিষ্যতে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে

তবে BVT প্রযুক্তিতে বিশ্বাসীরা বলছেন, রোগীর নিজস্ব শরীরের প্রয়োগ ছাড়া melittin‑এর কার্যকারিতা সীমিত হতে পারে—এটি অনেকটাই নির্ভর করে ডোজে নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তির সংবেদনশীলতার ওপর

এলির নিজস্ব জীবন যাত্রা শুধু এক বিস্ময়কর পুনরুত্থান নয়, বরং একটি জীবন্ত উদাহরণ যে মৌমাছির বিষের জটিল উপাদানগুলো আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনার চাবি হতে পারে। তিনি বর্তমানে মৌ-খামারে কাজ করেন, সৌন্দর্য পণ্য তৈরি করেন এবং Lyme রোগীদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি সেই প্রকৃত বিষ থেকে melittin সংগ্রহ করে গবেষণায় পাঠান—যা এক গ্রাহ্য প্রমাণ হতে পারে ভবিষ্যৎ ওষুধ অন্বেষণে

এই ঘটনাটি শুধু এক ব্যক্তির চিকিৎসামূলক অভিজ্ঞতা নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণে এনিয়ে মেলিটিন‑ভিত্তিক চিকিৎসা কতদূর বৈধ ও কার্যকর হতে পারে? জীবাণু এবং ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক দূর্যোগের মতো আচরণী এক উপাদান কি বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে?

এই প্রতিবেদনে এলি লোবেলের জীবনপরবর্তী যাত্রার মাইলফলক তুলে ধরা হলো সতর্ক, নিরপেক্ষ ও তথ্যভিত্তিকভাবে—যেখানে বিজ্ঞান, মানবসেবা ও গবেষণার অন্বেষণ এক আশাবাদী ভবিষ্যৎ রূপরেখা আঁকছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫