প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
দেহের সবচেয়ে নীরব অথচ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কিডনি। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার রক্ত পরিশোধন করে, শরীরের তরল ও খনিজের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণ করে এই অঙ্গদ্বয় দেহের অভ্যন্তরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যায়। কিন্তু কিডনির কার্যকারিতা দুর্বল হলে তা প্রথমদিকে তেমন কোনো স্পষ্ট উপসর্গ না দেখিয়ে দেহে ধীরে ধীরে নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে কিছু সূক্ষ্ম দৈনন্দিন লক্ষণ আছে, যা কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা জানান দিতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজেই কিছু লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা নেওয়া সম্ভব কিডনি সুস্থ আছে কি না। নিচে কিডনি ভালো থাকার ৫টি সহজ ইঙ্গিত দেওয়া হলো:
১. সকালে নিঃশ্বাস পরিষ্কার ও গন্ধহীন থাকে
যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে নিঃশ্বাসে কোনো দুর্গন্ধ বা ধাতব স্বাদ না থাকে, তবে এটি ভালো কিডনি কার্যকারিতার লক্ষণ। কারণ সুস্থ কিডনি রক্ত থেকে ইউরিয়া যথাযথভাবে অপসারণ করে, ফলে মুখে অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ হয় না।
২. সারাদিন শরীর চাঙা থাকে, হঠাৎ ক্লান্তি আসে না
কিডনি থেকে নিঃসৃত ‘ইরিথ্রোপয়েটিন’ হরমোন রক্তে লাল কণিকা তৈরি করে, যা শরীরের অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে। তাই কিডনি ভালো থাকলে সারাদিন শরীরে প্রাকৃতিক শক্তি অনুভূত হয় এবং হঠাৎ ক্লান্তি দেখা দেয় না।
৩. ত্বক থাকে আর্দ্র ও নরম
কিডনি শরীরের পানি ও খনিজ উপাদান নিয়ন্ত্রণ করে বলে ত্বক প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্র ও কোমল থাকে। রুক্ষ, টানটান বা অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক অনেক সময় কিডনির তরল ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
৪. সকালে চোখ-মুখে ফোলাভাব দেখা না যাওয়া
ঘুম থেকে উঠে যদি চোখ বা মুখে ফোলাভাব না থাকে, তবে কিডনি রাতের বর্জ্য তরল সঠিকভাবে নিঃসরণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিপরীতে, নিয়মিত ফোলাভাব কিডনির কাজে দুর্বলতা নির্দেশ করে।
৫. পেশিতে খিঁচ ধরা বা টান না লাগা
রাতে বা সকালে পা বা চোখে খিঁচ বা টান ধরা শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে, যা কিডনির কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিডনি ভালো থাকলে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং খিঁচ ধরা এড়ানো যায়।
কিডনি সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান, লবণ ও প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস সামলে রাখা, ধূমপান ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ এড়িয়ে চলার পাশাপাশি বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া কিডনি রোগীরা খাদ্যাভ্যাসেও সচেতন না হলে বিপদে পড়তে পারেন। অনেক সময় পুষ্টিকর মনে হওয়া খাবার—যেমন শুকনো ফল—তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম ও ফসফরাসযুক্ত খেজুর বা অ্যাপ্রিকট এড়িয়ে, তুলনামূলক নিরাপদ ম্যাকাডেমিয়া নাট বা আখরোট বেছে নেওয়া যেতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—কিডনি তার অসুস্থতা নীরবে জানায়। তাই আগেভাগেই শরীরের ইঙ্গিতগুলো বোঝা, সচেতন জীবনযাপন এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই কিডনিকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখার শ্রেষ্ঠ উপায়।