শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত ১১, উত্তপ্ত ‘সাবা সাবা’ দিবস ঘিরে দেশজুড়ে চরম সহিংসতা

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
  • ২ বার
কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত ১১, উত্তপ্ত ‘সাবা সাবা’ দিবস ঘিরে দেশজুড়ে চরম সহিংসতা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

কেনিয়ায় গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের ৩৫তম বার্ষিকীতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই বিক্ষোভের পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের হেফাজতে এক ব্লগারের মৃত্যুসহ ক্রমাগত দুর্নীতি, করবৃদ্ধি, নিখোঁজ সরকারবিরোধীদের নিয়ে জমে ওঠা গণবিক্ষোভ। বার্ষিক ‘সাবা সাবা’ দিবসে সংঘটিত এই ভয়াবহ ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ।

গত ৭ জুলাই (সোমবার) নাইরোবি, এলডোরেট, এমবু, নাকুরু এবং নিয়েরি শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। নাইরোবির কাংগেমি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও শেষ পর্যন্ত গুলি ছোড়ে। রয়টার্সের এক সাংবাদিক সেখানে একজন বিক্ষোভকারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন।

কাংগেমির ইগল নার্সিং হোমে আহত ছয়জনকে ভর্তি করা হলে, তাঁদের মধ্যে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। কেনিয়াট্টা ন্যাশনাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ২৪ জন আহত বিক্ষোভকারীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

সরকারি বিবৃতিতে পুলিশ স্বীকার করেছে, বিক্ষোভকালে দেশজুড়ে অন্তত ১১ জন নিহত এবং ৫২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। যদিও এই প্রাণহানির জন্য কার গুলিকে দায়ী করা হবে, সে বিষয়ে পুলিশ কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্য দেয়নি। তারা শুধু বলেছে, ‘প্রাথমিক তদন্তে প্রাণহানি, আহত, যানবাহন ক্ষয়ক্ষতি এবং লুটপাটের একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে।’

বিক্ষোভ শুরু হয় মূলত ২০২৪ সালের জুনে, যখন সরকার কর বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। তখন থেকেই যুবাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। পরবর্তীতে আন্দোলনের পরিসর বাড়তে থাকে—দুর্নীতি, পুলিশি নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সরকারবিরোধীদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে জনমনে ক্ষোভ জমতে থাকে।

বিক্ষোভকারীরা নাইরোবির কাংগেমি এলাকা থেকে শহরের কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কড়া অবস্থান নেয়। ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই সংঘর্ষ চরমে ওঠে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশ অবরোধ অতিক্রম করতে চাইলে গুলি চালানো হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের কিছু ব্যক্তি এবং সশস্ত্র গ্যাং সদস্যদেরও বিক্ষোভ দমনে অংশ নিতে দেখা যায়।

কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (KNCHR) জানিয়েছে, তারা নাইরোবি এবং এলডোরেট এলাকায় বহু ব্যক্তি—যারা ইউনিফর্মে ছিলেন না—অচিহ্নিত গাড়িতে চলাফেরা করতে দেখেছেন। আইন অনুসারে, পুলিশের জন্য নির্ধারিত পোশাক এবং পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক হলেও, KNCHR-এর পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে অনেক ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। KNCHR আরও অভিযোগ করেছে, সশস্ত্র গ্যাং সদস্যরা পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চাবুক ও চাপাতি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

নাকুরুতে ঘোড়ায় চড়া পুলিশ সদস্যরা পাথর নিক্ষেপকারী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে, অন্যদিকে সরকার রাজধানীর প্রবেশমুখগুলো বন্ধ করে দেয়। নাইরোবি শহরের অধিকাংশ রাস্তা তখন প্রায় ফাঁকা, যান চলাচল একপ্রকার বন্ধ, বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি স্কুল ও অন্তত একটি শপিং মলও।

কেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিপচুম্বা মুরকমেন আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তার ভাষায়, “শান্তিপূর্ণ মিছিলের সুযোগ নিয়ে যারা বিশৃঙ্খলা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে চায়, তাদের মোকাবেলায় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।” তিনি গত মাসে এ আন্দোলনকে ‘অসন্তোষের ছদ্মবেশে সন্ত্রাস’ বলেও অভিহিত করেছিলেন।

এই প্রতিবাদে ঘি ঢেলেছে ব্লগার ও শিক্ষক আলবার্ট ওজওয়াংয়ের মৃত্যু। গত মাসে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুবরণ করা ওজওয়াংয়ের ঘটনায় জনরোষ চরমে পৌঁছে। এই ঘটনার প্রতিবাদেই ২৫ জুন অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নিহত হয় আরও ১৯ জন। বর্তমানে ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। অভিযুক্ত সবাই আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।

কেনিয়ার গণতন্ত্রের ইতিহাসে ‘সাবা সাবা’ দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৯০ সালের ৭ জুলাই বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে যখন প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আরাপ মই সরকারের বিরুদ্ধে জনতা রাস্তায় নামে, তখনই এই দিনটি গণআন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে কেনিয়ায় বহু দলীয় নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হয়।

এবারের ‘সাবা সাবা’ দিবসে যে গণবিক্ষোভ সংঘটিত হলো, তা শুধুই অতীতের স্মৃতিচারণ ছিল না, বরং বর্তমান সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণ, অবিচার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গণমানুষের প্রতিবাদ। যে প্রশ্ন এখন সামনে—কেনিয়ার সরকার এই আন্দোলনের ভাষা বুঝবে, নাকি আরও কঠোর দমননীতি নিয়ে এগোবে? মানুষ এর উত্তর খুঁজছে রাজপথে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকা আহতদের চোখে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫