প্রকাশ: ২রা জুলাই, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্পিনবান্ধব উইকেটের পূর্বাভাস থাকলেও বুধবার সকালে বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বল হাতে দারুণ আগ্রাসী শুরু করে বাংলাদেশের পেসাররা। মাত্র ১০ ওভারের মধ্যেই স্বাগতিক লঙ্কানরা হারিয়ে বসে নিজেদের তিন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন তাসকিন আহমেদ, যিনি নিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওভারে পরপর দুটি উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলেন। অন্যপ্রান্তে প্রথম উইকেট তুলে নেন উদীয়মান পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
বাংলাদেশ অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার অধীনেই তিন পেসারের আক্রমণাত্মক কৌশলকে সফল করে তোলেন তাসকিন, মুস্তাফিজ ও তানজিম। সেই সঙ্গে একাদশে অন্তর্ভুক্ত হন দুই ওয়ানডে অভিষিক্ত—বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম এবং উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান পারভেজ হোসেন ইমন।
দিনের চতুর্থ ওভারে ম্যাচের প্রথম ধাক্কাটি দেন তানজিম হাসান সাকিব। অফস্টাম্পের বাইরে বলটি রেখে ব্যাটসম্যানকে প্রলুব্ধ করেছিলেন তিনি। নিশাঙ্কা সেই প্রলোভনে পড়ে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাত্র ৮ বল খেলে শূন্য রানে। তখন লঙ্কানদের সংগ্রহ মাত্র ৫ রান।
এরপর আক্রমণে আসেন তাসকিন আহমেদ। চোট কাটিয়ে ফেরা এই গতিমান পেসার প্রথম ওভারটি মেডেন দিয়ে শুরু করলেও নিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওভারে ধারাবাহিক দুই উইকেট তুলে নিয়ে দৃঢ় বার্তা দেন।
প্রথমে ১৩ বলে ৬ রান করা ওপেনার নিশান মাদুশাকা ইনসাইড এজে স্টাম্প উপড়ে ফেলে দেন তাসকিন। বলটি ছিল অফস্টাম্পের বাইরে, এবং ব্যাটসম্যান বলের লাইনে না গিয়ে খেলতে গিয়ে বোকা বনে যান।
এরপর ষষ্ঠ ওভারে মিড-অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ক্যাচ তুলে দেন কামিন্দু মেন্ডিস। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ নির্ভুলভাবে সেই ক্যাচ তালুবন্দি করলে লঙ্কানদের ব্যাটিং বিপর্যয় আরও ঘনীভূত হয়। মেন্ডিস ফিরেন মাত্র ৪ বল খেলে কোনো রান না করেই।
এই সময়ে উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা পড়ে যায় বিপাকে। উইকেটে আসা নতুন ব্যাটারদের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। বাউন্স, সুইং ও গতি—সবকিছুই নিখুঁতভাবে কাজে লাগাচ্ছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা।
ম্যাচের শুরুতে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া শ্রীলঙ্কা হয়তো ভাবতেই পারেনি এমন এক ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। প্রেমাদাসার পীচে যেখানে স্পিনারদের জন্য সহায়তা পাওয়ার কথা, সেখানে টাইগার পেসারদের দাপটই হয়ে ওঠে মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
ম্যাচের এই শুরুর ধাক্কা লঙ্কান শিবিরে যে কী রকম প্রভাব ফেলেছে, তা বোঝা যাবে মধ্য ও শেষ ওভারে তাদের ব্যাটিং প্রত্যুত্তর কতটা সফল হয় তার ওপর। তবে তাসকিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশি পেস আক্রমণ এই মুহূর্তে যেভাবে খেলছে, তাতে করে সফরকারীরা শুরুতেই ম্যাচের চালিকা শক্তি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলা যায়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বোলিং ইউনিটের এমন দুর্দান্ত সূচনার পর দলের ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা এখন জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করার দিকেই কেন্দ্রীভূত। সেজন্য প্রয়োজন এখন পেসারদের এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং স্পিনারদের দিয়ে মধ্য ওভারগুলোতে চাপে রাখা। এর মধ্যে ব্যাটিং ইউনিট যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, তবে কলম্বোর প্রেমাদাসায় এই ম্যাচটি টাইগারদের ইতিহাসে আরেকটি স্মরণীয় জয় হয়ে উঠতে পারে।