শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

রিজার্ভে ফিরছে আস্থা: প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ডের পর বৈদেশিক মুদ্রায় বড় সঞ্চার

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫
  • ৭ বার
রিজার্ভে ফিরছে আস্থা: প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ডের পর বৈদেশিক মুদ্রায় বড় সঞ্চার

প্রকাশ: ২৯শে জুন, ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল বার্তা এনে দিয়েছে সর্বশেষ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিক সাফল্যের পর এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দীর্ঘদিন পর একটি ইতিবাচক অর্থনৈতিক ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

রোববার, ২৯ জুন ২০২৫, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, দেশের মোট গ্রস রিজার্ভ বর্তমানে ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ। এ তথ্য অনুযায়ী, মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮০ কোটি ডলারেরও বেশি, যা অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত বহন করে।

তবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর নির্দেশনা অনুসারে বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই রিজার্ভের পরিমাণ হয় ২৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর নিট রিজার্ভ বা প্রকৃত রিজার্ভ, যা থেকে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক দায় বাদ দেওয়া হয়, তার পরিমাণ এখন ২০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। এই তিনটি মানদণ্ডেই রিজার্ভ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে, যা স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় স্বস্তির বার্তা বহন করছে।

এর আগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার এবং নিট রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ খুব অল্প সময়ের মধ্যে রিজার্ভে এই বাড়তি প্রবাহ মূলত রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণেই সম্ভব হয়েছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বিশেষ করে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে এবারের অর্থবছরে যে উল্লম্ফন দেখা গেছে, তা নজিরবিহীন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ২৮ জুন পর্যন্ত দেশে এসেছে মোট ৩০ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো একক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড। এর মধ্যে শুধু জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনে এসেছে ২৫৩ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার।

এই প্রবাহের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে, যার পরিমাণ ১৬১ কোটি ৬১ লাখ ডলার। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে এসেছে ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৬ কোটি ১২ লাখ ডলার এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

নানা সংকট, বৈদেশিক ব্যয়ের চাপ, রপ্তানি আয় হ্রাস এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ বৃদ্ধির এই ধারা অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত তৈরিতে আশাজনক। একদিকে যেমন প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর সরকারের নির্ভরতা বাড়ছে, অন্যদিকে রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থাগুলোর আস্থা ফেরানোও সহজ হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক প্রণোদনা কর্মসূচি, যেমন আইনগত হুন্ডি রোধে কঠোরতা, এক্সচেঞ্জ হাউজ ব্যবস্থায় উন্নয়ন এবং নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ফলেই প্রবাসী আয়ের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ দৃশ্যমান হয়েছে। পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও স্বচ্ছ এবং বাস্তবমুখী কৌশল গ্রহণও এই ফলাফলের অন্যতম চালিকাশক্তি।

বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এই রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ বৃদ্ধির সংমিশ্রণ সরকারের রাজস্ব পরিকল্পনা, ঋণ পরিশোধ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই ধারা দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে প্রবাসী আয় প্রবাহে স্থিতিশীলতা এবং রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনয়ন অপরিহার্য। সেই সঙ্গে প্রবাসী আয় ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা, দ্রুত ডেলিভারি ব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং চ্যানেলগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধিও নিশ্চিত করতে হবে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকের দিকে তাকালে রিজার্ভে এই উন্নতি নিঃসন্দেহে একটি বড় ধাপ। যা প্রমাণ করে যে, বৈদেশিক খাতের ওপর যতই চাপ থাকুক না কেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের শ্রমঘামে অর্জিত অর্থ দেশের মেরুদণ্ড শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমান ধারার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামীতে বাংলাদেশ আরও বেশি আত্মনির্ভরশীল ও অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে, এমন আশাবাদ অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট মহলে জোরালোভাবেই উচ্চারিত হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫