প্রকাশ: ০৮ জুলাই, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেশের অর্থনীতিতে উদ্বেগের সৃষ্টি করলেও, এই শুল্ক পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশার আলো দেখিয়েছেন বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, বুধবার (৯ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই আলোচনার মাধ্যমে শুল্কের হার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এই পরিমাণ ঘাটতির জন্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের যৌক্তিকতা নেই বলে তিনি মনে করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি ও সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে এই শুল্কের হার কমানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে রপ্তানি খাতের জন্য এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে, সোমবার (৭ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশিত একটি চিঠিতে জানান, আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। এই চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য করার লক্ষ্যে এই শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাণিজ্য বাজার উন্মুক্ত করে এবং শুল্ক ও অ-শুল্ক বাধা দূর করে, তাহলে এই শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।
এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি প্রধান বাজার, এবং এই খাত থেকে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে। এই প্রেক্ষাপটে, শুল্কের হার কমানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে এই আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত শুক্রবার বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফলাফলের আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়, যা আগের গড় ১৫ শতাংশ শুল্কের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। তবে, বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার আশঙ্কায় ট্রাম্প ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখেন। এই সময়সীমা ৯ জুলাই শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা আগের ৩৭ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ কম হলেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য এখনও একটি উল্লেখযোগ্য চাপ।
ট্রাম্পের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। এছাড়া, তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশ যদি মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ৩৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত শুল্ক যোগ করা হবে। এই হুমকি বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক কৌশল নির্ধারণে আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা এই শুল্ক আরোপের ফলে রপ্তানি খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, বাংলাদেশ শুল্ক কমানোর জন্য সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার আশা করছে সরকার, যা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে।