শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

রেকর্ড রেমিট্যান্সে বদলে গেল অর্থনীতির চিত্র: ১১ মাসেই রিজার্ভ বেড়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
  • ১ বার
রেকর্ড রেমিট্যান্সে বদলে গেল অর্থনীতির চিত্র: ১১ মাসেই রিজার্ভ বেড়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি চলতি অর্থবছরে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। মাত্র ১১ মাস আগে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে রিজার্ভ যেখানে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল, সেখানে ২০২৫ সালের জুন শেষে এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। দীর্ঘ সময়ের রিজার্ভ ঘাটতির পর এই ইতিবাচক পরিবর্তন দেশের অর্থনীতিকে আবারও পুনরুদ্ধারের পথে ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে রেমিট্যান্স প্রবাহে অভূতপূর্ব গতি। সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ। আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এ যেখানে প্রবাসী আয় ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, সেখানে চলতি বছরে ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি স্পষ্টতই বড় ধরনের সাফল্যের বার্তা বহন করে।

এছাড়া ২০২৫ সালের মার্চ মাসে একক মাসে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসা দেশের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক। এমনকি বছরের প্রতিটি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থেকেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতিফলনও বটে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ প্রসঙ্গে জানিয়েছে, ডলারের বিনিময় হার দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকায় এবং প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধভাবে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “প্রায় ১১ মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কাঠামোগত সংস্কার এবং অর্থনৈতিক খাতে স্বচ্ছতা আনয়নের নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর ফলে জনগণের আস্থা বেড়েছে এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরেছে।”

তিনি আরও বলেন, মানি লন্ডারিং কমে যাওয়া, রপ্তানি আয় বাড়া, এবং পুঁজিবাজারে কারসাজি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ অর্থনীতির সামগ্রিক ভিত্তিকে মজবুত করেছে। রপ্তানি আয় এই বছর প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই অর্জনও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে নিট রিজার্ভ বর্তমানে ২৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সহনশীল অবস্থান। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং ও ঋণ সক্ষমতাকে ইতিবাচকভাবে প্রতিফলিত করবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “ডলার সংকটের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এলসি খোলা পর্যন্ত কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আজ সেখান থেকে উঠে এসে ৩০ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এবং ৩১ বিলিয়নের ওপরে রিজার্ভ নিঃসন্দেহে অর্থনীতিকে এক নতুন জায়গায় নিয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকারের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর চাপ হ্রাস এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনে কাজ করেছে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, এখনো সংকট পুরোপুরি কেটে যায়নি। রিজার্ভ বৃদ্ধির এই ধারা ধরে রাখতে হলে নীতি গ্রহণে আরও স্বচ্ছতা, প্রবাসীদের সঙ্গে টেকসই সম্পর্ক এবং রপ্তানিমুখী উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি’র ডিএমডি আবদুল কাইউম চৌধুরী বলেন, “২০২৪ সালের আগস্ট থেকেই আমরা লক্ষ করছি রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছিল, তা থেকে ধীরে ধীরে স্বস্তির দিকে ফিরতে পেরেছি।” তার মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ যে মাত্রায় বেড়েছে, তা শুধুমাত্র অর্থনীতিকেই নয়, সরকারকেও বড় ধরনের নীতিগত স্বস্তি দিয়েছে।

সার্বিকভাবে এই রিজার্ভ বৃদ্ধিকে অনেকেই নতুন সরকারের অর্থনৈতিক দক্ষতার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক বাজারের চাপে উন্নয়নশীল দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ আবারও প্রমাণ করছে—দূরদর্শী নেতৃত্ব, প্রবাসী জনগোষ্ঠীর আস্থা এবং সুসংহত নীতিমালাই একটি দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারে। তবে সামনের দিনগুলোতে এই অগ্রগতি ধরে রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫