প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক । আজকের খবর অনলাইন
এক সময় মানুষ তার কষ্টার্জিত অর্থ সিন্দুকে বা মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতো। কিন্তু আধুনিক সময়ে প্রযুক্তির সঙ্গে অর্থের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা বদলে গেছে। এখন অধিকাংশ মানুষই ব্যাংকে টাকা রাখেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাই বুঝে নেওয়া দরকার, কোন ব্যাংক নিরাপদ এবং ভালো ব্যাংক চেনার উপায় কী।
বাংলাদেশে ২০২৫ সালের শুরুতে প্রকাশিত ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিটম্যাপ’ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে:
দেশের ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ৯টি ব্যাংক গুরুতর ঝুঁকিতে থাকা ‘রেড জোনে’ রয়েছে।
২৯টি ব্যাংক রয়েছে ‘ইয়েলো জোনে’, অর্থাৎ মাঝারি ঝুঁকির মধ্যে।
মাত্র ১৬টি ব্যাংক রয়েছে ‘গ্রিন জোনে’, অর্থাৎ নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত।
এই বাস্তবতায়:
কেবল উচ্চ মুনাফা বা আকর্ষণীয় অফারের ভিত্তিতে ব্যাংক নির্বাচন করলে সঞ্চয় বিপদে পড়তে পারে।
তাই এখন সময় এসেছে সচেতনতার, যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
নিরাপদ ব্যাংক চেনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন:
১. প্রযুক্তিগত সুবিধা ও সেবার মান
ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম নেটওয়ার্কের বিস্তার ও আধুনিকতা দেখতে হবে।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ব্যাংকগুলোতে দুর্বলতা ও অনিয়মের আশঙ্কা বেশি।
২. গ্রাহক অভিযোগের পরিমাণ
অভিযোগ বেশি মানে সেবা দুর্বল ও গ্রাহক অসন্তোষ। কম অভিযোগ মানে সন্তুষ্ট গ্রাহক ও ভালো সেবা।
৩. অতিরিক্ত সুদের প্রলোভন এড়িয়ে চলা
বাজারের তুলনায় অত্যধিক সুদ প্রদান করলে সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ এতে ব্যাংকের আর্থিক দুর্বলতা থাকতে পারে।
৪. খেলাপি ঋণের হার (NPL)
সুস্থ ব্যাংকের NPL সাধারণত ৫% এর নিচে থাকে।
বেশি NPL মানে ব্যাংক আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
৫. অ্যাডভান্স-টু-ডিপোজিট রেশিও
ব্যাংক কতটুকু আমানতের বিপরীতে ঋণ দিচ্ছে তা দেখতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা ছাড়ালে সেই ব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ।
৬. সংবাদমাধ্যম ও অনলাইন তথ্য যাচাই
ব্যাংক সংক্রান্ত অনিয়ম, দুর্বলতা বা ঋণ সমস্যা নিয়ে খবর ও প্রতিবেদন খুঁজে দেখা উচিত।
৭. রেটিং এর পাশাপাশি বাস্তবতা যাচাই
অনেক সময় ভালো রেটিং পেলেও বাস্তবে ব্যাংক দুর্বল হতে পারে।
তাই গ্রাহকের অভিজ্ঞতা, শাখার সেবা এবং আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ জরুরি।
সবশেষে মনে রাখতে হবে, ব্যাংক মানে শুধু মুনাফা নয়, এটি আপনার আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়। তাই সুদের হার ছাড়াও ব্যাংকের সার্বিক স্বাস্থ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করে টাকা রাখা উচিত। সচেতন সিদ্ধান্তই নিরাপদ ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।