প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগ থাকলেও চলতি সপ্তাহে এসেছে আশাব্যঞ্জক এক খবর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে অর্থনীতির এক সংকটময় অধ্যায় পেরিয়ে এখন কিছুটা স্থিতিশীলতার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান মঙ্গলবার (১ জুলাই) সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ পরিমাপের নতুন মানদণ্ড অনুযায়ী—যা ব্যালান্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল বা বিপিএম-৬ নামে পরিচিত—বর্তমানে দেশের রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এই রিজার্ভ হিসাব শুধুমাত্র সেই অর্থকেই অন্তর্ভুক্ত করে, যা সরাসরি আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ব্যবহারযোগ্য এবং আইএমএফের মানদণ্ড অনুসরণ করে নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, বিপিএম-৬ ভিত্তিক হিসাব এক ধরনের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও বাস্তবভিত্তিক চিত্র তুলে ধরে।
গত কয়েকদিনে রিজার্ভের উত্থান বেশ লক্ষণীয়। গত রোববার বিপিএম-৬ ভিত্তিক রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা একদিনের ব্যবধানে প্রায় ৩৪ কোটি ডলার বেড়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব পদ্ধতিতে হিসাব করা মোট রিজার্ভ একই সময়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে প্রায় ৩৭ কোটি ডলারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার এবং মোট রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় আজকের চিত্রটি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং অর্থনৈতিক সূচক হিসেবে ইতিবাচক বার্তা বহন করে।
আরিফ হোসেন খান আরও জানিয়েছেন, আইএমএফ হিসাব অনুসারে বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট রিজার্ভ হিসাব অনুসারে বর্তমানে এই পরিমাণ তিন হাজার ১৬৮ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, দেশের ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বা readily usable reserve বর্তমানে এক হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি, যা জরুরি আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক প্রবাহ এবং কিছু আমদানি ব্যয় হ্রাসের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় সংযত নীতি গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতাও ভূমিকা রেখেছে।
তবে সামনে আরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্য অস্থির থাকায় এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রানীতির কড়াকড়ির প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তেই পারে। এমন বাস্তবতায় এই রিজার্ভ বৃদ্ধিকে শুধুমাত্র সংখ্যাগত সফলতা না ভেবে তার সঠিক ব্যবহার, স্বচ্ছতা এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এই ধরণের রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত, যা দীর্ঘমেয়াদে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে। তবে এই ধারা ধরে রাখতে হলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ নয়, ব্যয়ের দিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ অপরিহার্য হয়ে উঠবে।