প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
রাজধানীর মিরপুরে এক সাবেক শ্রমিক লীগ নেতার বাসায় ঢুকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দাবি ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে ছাত্রদল ও যুবদলের চার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি ঘটে গত ৬ জুলাই রোববার গভীর রাতে, মিরপুরের পশ্চিম মণিপুর এলাকায়। যেখানে রাজনীতি আর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এক ভয়াবহ মোড় নেয়, সেখানে দলীয় পরিচয় সামনে এনে চাঁদাবাজির মতো অপরাধ চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
ঘটনার শিকার সিরাজুল ইসলাম (৫৬), যিনি একসময় শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তার পরিবারের সদস্যরা জানান, রাত প্রায় ১০টার দিকে হঠাৎ করেই ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল তাদের বাসায় হানা দেয়। নিজেদের ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা পরিচয় দিয়ে তারা সরাসরি সিরাজুলকে উদ্দেশ করে বলতে থাকে, ‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, ফ্যাসিস্টের লোক, তোকে পুলিশে ধরিয়ে দেব। বাঁচতে চাইলে এখনই ২০ লাখ টাকা দে।’
সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় এক ভয়ঙ্কর মানসিক ও শারীরিক চাপের রাত্রি। সিরাজুল ও তার স্ত্রী জাহানারা ইসলাম প্রাণভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন। প্রথমে বাসায় থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। কিন্তু তাতেও দমে না গিয়ে অভিযুক্তরা বাকি টাকা জোগাড় করতে চাপ দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে জাহানারা ইসলাম চতুর্থ তলার এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ধার নিয়ে দেন তাদের। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরও ৩০ হাজার টাকা এবং ছেলেমেয়ের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে রাত তিনটা নাগাদ ৫ লাখ টাকা আদায় করে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল তারা।
এ সময় খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ ও র্যাব। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। বাকি সদস্যরা চাঁদার টাকার একটি বড় অংশ নিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন মিরপুর থানা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান ওরফে মিন্টু (৩৫), যুগ্ম আহ্বায়ক তাবিত আহমেদ আনোয়ার (৩৫), যুবদল নেতা রতন মিয়া (৩৪), এবং ছাত্রদলকর্মী ইসমাইল হোসেন (২৪)। পুলিশ তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল ও ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে, যা চাঁদাবাজির অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ রোমন জানান, “রোববার গভীর রাতে একটি সরকারি নম্বরে ফোন করে জানানো হয়, কিছু লোক পুলিশ পরিচয়ে বাসায় ঢুকে চাঁদা দাবি করছে। আমাদের টিম ও র্যাব তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে যায় এবং অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।”
সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা ইসলাম সোমবার সকালে এই চারজনসহ অজ্ঞাত আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরণে পুরো ঘটনার বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়—কীভাবে বাসায় ঢুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয়, কীভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয় এবং কীভাবে তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের অর্থ নিয়ে তাদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন।
এদিকে সোমবার গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, মামলার তদন্ত চলমান এবং পলাতক বাকি আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এমন ভয়াবহ চাঁদাবাজি এবং তা থেকে রক্ষা পেতে পুলিশের হস্তক্ষেপ—সবকিছুই স্পষ্ট করে দেয়, কীভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন সমাজকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।