প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক
আজকের খবর অনলাইন
টেস্ট সিরিজে ব্যর্থতার পর আবারও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কলম্বো টেস্টে পরাজয়ের মাধ্যমে টেস্ট সিরিজ হাতছাড়া করার হতাশা এখনও তাজা থাকলেও, সেই দুঃখ কাটিয়ে একদিনের ক্রিকেটে নতুন উদ্যমে শুরু করতে চায় টাইগাররা। শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে সিরিজকে সামনে রেখে দলের নেতৃত্বে আনা হয়েছে পরিবর্তন—নাজমুল হোসেন শান্তর পরিবর্তে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে। এই সিরিজ দিয়েই ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করছেন মিরাজ।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এখন চলছে ব্যস্ত অনুশীলন। তীব্র গরমের মধ্যেও দিনভর অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। পেসার তাসকিন আহমেদ ও উঠতি তারকা নাহিদ রানার বোলিং নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন পেস বোলিং কোচ শন টেইট। বিশেষ করে টেস্ট সিরিজে কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্স না করা নাহিদকে ঘিরে আলাদা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন কোচিং স্টাফ। তাঁর লাইন ও লেন্থ নিয়ে একাধিকবার ভিডিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে অনুশীলনের আগে ও পরে।
প্রধান কোচ ফিল সিমন্স পুরো দলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে মাঠে যেমন সক্রিয়, তেমনি ড্রেসিংরুমেও খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটাচ্ছেন। সিমন্স মনে করছেন, টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতা মাথায় রেখে ওয়ানডেতে নামলে সাফল্য আসবে না। তাই খেলোয়াড়দের মনোসংযোগ আনতে বারবার তিনি জোর দিচ্ছেন আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মানসিকতার ওপর। এ প্রসঙ্গে সিমন্স বলেন, “প্রতিটি ফরম্যাট ভিন্ন, টেস্টের ব্যর্থতা এখানে টেনে আনার কোনো মানে নেই। খেলোয়াড়দের স্বাধীনভাবে খেলতে হবে এবং মাঠে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে।”
অনুশীলনে নজর কেড়েছেন শামীম হোসেন। দীর্ঘদিন পর কলম্বোতে ফিরে নিজের পুরনো ভুল শুধরে নতুন করে শুরু করতে চান তিনি। নেটে তার ব্যাটিং মনোভাবেই এসেছে পরিবর্তন—আগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ শট নয়, বরং পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে খেলার চেষ্টা করছেন। তার স্ট্রাইক রোটেশন ও ব্যাট-প্যাড সংযোগের সাবলীলতা প্রশংসা কুড়িয়েছে কোচদের।
তবে অনুশীলনের মধ্যে একটি বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের মাঠে প্রবেশের সময় মাঠের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মী ভুলবশত মনে করেন, টাইগাররা হয়তো উইকেট দেখতে এসেছেন। ফলে তারা প্রথমে মাঠে প্রবেশে বাধা দেন। পরে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে মাঠ কর্মীরাই আবার খেলোয়াড়দের অনুশীলনে সহায়তা করেন। এই ঘটনা যদিও হাস্যকর ছিল, তবে সেটিও প্রমাণ করে বিদেশের মাটিতে অনেক সময় কতটা কঠিন হতে পারে প্রস্তুতির প্রতিটি ধাপ।
বাংলাদেশ দলের জন্য ওয়ানডে ফরম্যাট বরাবরই কিছুটা স্বস্তিদায়ক। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ভালো ফল করেছে, যদিও ধারাবাহিকতা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। শ্রীলঙ্কা সফর তাই টাইগারদের জন্য আরেকটি বড় পরীক্ষা। নতুন অধিনায়ক মিরাজের নেতৃত্বে তারা কতটা পরিপক্ব ও প্রস্তুত হয়ে মাঠে নামতে পারেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্টের হতাশা মুছে ফেলে একটি সফল ওয়ানডে সিরিজের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। মিরাজ, তাসকিন, নাহিদ ও শামীমদের পারফরম্যান্সই বলে দেবে, এই দল সত্যিকার অর্থেই ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে কিনা। তবে প্রস্তুতি এবং মানসিক দিক থেকে দল যে ইতোমধ্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন অপেক্ষা মাঠের বাস্তবতায় সেই প্রমাণ রাখার।