প্রকাশ: ২৯শে জুন, ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
রাজধানী ঢাকার ভাটারা এলাকা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে আছেন এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী—মাহিরা বিনতে মারুফ পিউলি। রবিবার সকালে নিজ বাসা থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেও তিনি আর গন্তব্যে পৌঁছাননি। তার এই রহস্যজনক নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় পরিবার, স্বজন এবং স্থানীয় মহলে চরম উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।
মাহিরার বড় বোন মারিয়া বিনতে মারুফ জানিয়েছেন, মাহিরা মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী এবং তার পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল মিরপুর কলেজে। সকাল ৮টার দিকে সে বাসা থেকে একাই বের হয়। কিন্তু দুপুরে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে জানানো হয়, মাহিরা সেদিনের পরীক্ষায় অংশ নেয়নি এবং কেন্দ্রে উপস্থিতও হয়নি। এরপর পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আশপাশের এলাকায় খোঁজ করেও কোনো সন্ধান পাননি।
ভাটারা থানাধীন জগন্নাথপুর এলাকার কেবি বিল্ডিংয়ে পরিবারসহ বসবাসকারী মাহিরার বাবার নাম মো. আব্দুল্লাহ আল মারুফ এবং মায়ের নাম রেহানা পারভীন। নিখোঁজের সময় মাহিরার পরনে ছিল সাদা কলেজ ড্রেস। গায়ের রঙ ফর্সা, উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি।
ঘটনার পরপরই তার বড় বোন মারিয়া ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর: ১৩৩৬/২৫) করেন। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিখোঁজ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। মাহিরার মামা মোহাম্মদ জহিরুল হুদা জালাল তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি লেখেন, “আজ রবিবার সকাল ৮টায় আমার ভাগ্নি মাহিরা বিনতে মারুফ পিউলি ভাটারা এলাকা থেকে একাই পরীক্ষার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু তারপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষাকেন্দ্রেও সে অনুপস্থিত ছিল। দয়া করে সবাই ওকে খুঁজে পেতে সাহায্য করুন।”
এ ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। অনেকেই পোস্টটি শেয়ার করছেন এবং দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন তরুণদের নিরাপত্তা নিয়ে। বিশেষ করে এক পরীক্ষার্থীর এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় শিক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভাটারা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তদন্ত চলছে এবং আমরা পরিবারকে আশ্বস্ত করেছি, কোনো কিছু জানামাত্রই তাদের অবহিত করা হবে। এখন পর্যন্ত কোনো বড় ক্লু মেলেনি, তবে আমরা সব সম্ভাব্য দিক বিবেচনায় রেখে কাজ করছি।”
এইচএসসি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এই ঘটনার পর বিশেষ করে কিশোরী শিক্ষার্থীদের চলাফেরা ও নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তা আরও বাড়ছে। অনেকে দাবি তুলেছেন, রাজধানীতে সিসিটিভি কাভারেজ বাড়ানোর পাশাপাশি নিখোঁজ সংক্রান্ত ঘটনার দ্রুত অনুসন্ধানে পুলিশ প্রশাসনকে আরও দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই মুহূর্তে মাহিরা বিনতে মারুফ পিউলির সন্ধান পাওয়া ও তাকে নিরাপদে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই মুখ্য নয়। পরিবারের পক্ষ থেকে যে কোনো তথ্য পেলে ভাটারা থানায় অথবা সরাসরি ০১৭১১২৩৭৬৯৪ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মাহিরার পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন, হয়তো কখনও কোনো এক মুহূর্তে ফোনটি বেজে উঠবে, দরজায় কড়া নাড়বে হারিয়ে যাওয়া মেয়ে। সে আশায়, শহরের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন একজন অসহায় মা, শোকভারে নত হয়ে আছেন একজন বাবা, আর প্রার্থনায় হাত তুলেছেন তার স্বজনেরা।