রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আবারও রিমান্ডে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা
প্রকাশ: ২৭শে জুন ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক
আজকের খবর অনলাইন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় আবারও চার দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় আজ শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ এ আদেশ দেন।
সকালের দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামসুজ্জোহা সরকার নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করেন এবং তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। দুপুর আড়াইটার পর তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলের আবেদন করে জামিন প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী সর্বোচ্চ রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। শুনানি শেষে আদালত নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগেও একই মামলায় গত সোমবার চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল নূরুল হুদাকে। তখনও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল পুলিশ। আদালত আংশিক মঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ড দিয়েছিলেন।
গত রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ‘মব’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হেনস্তার শিকার হন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ জানায়, বিএনপির দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এই মামলার বাদী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান। তিনি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় উল্লেখযোগ্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছেন ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সিইসি কেএম নূরুল হুদা এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মামলার ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহ, সাংবিধানিক দায় অমান্য এবং গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার অন্য এক আসামি, সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকেও গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং গতকাল আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আইন ও রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে এটি এক নজিরবিহীন ঘটনা যেখানে একাধিক সাবেক নির্বাচন কমিশনারকে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত করে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া হলো। এতে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও অতীত নির্বাচনগুলোর স্বচ্ছতা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এদিকে, এই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা গভীরভাবে নজর রাখছে বলে জানা গেছে। কেউ কেউ এটিকে গণতন্ত্র রক্ষার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখলেও, অনেকে একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলেও আখ্যায়িত করছেন।
তবে সরকারপক্ষ এখনও এই মামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আগামী দিনগুলোতে এই মামলার গতি-প্রকৃতি ও বিচারিক কার্যক্রম দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।