প্রকাশ: ০৮ জুলাই, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটি দুই দলের জন্যই অলিখিত ফাইনাল, কারণ এর ফলাফলই নির্ধারণ করবে সিরিজের ভাগ্য। মঙ্গলবার সকালে টস জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭৭ রানের বড় ব্যবধানে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৬ রানের জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা এনেছে। এখন পাল্লেকেলের এই ম্যাচে জিতলেই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের ঐতিহাসিক কীর্তি গড়তে পারবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয় এখনো অধরা। এর আগে দুইবার সিরিজ ড্র হয়েছিল, তবে তা বৃষ্টির কারণে ১-১ সমতায় শেষ হয়। এবার টাইগারদের সামনে সেই ইতিহাস গড়ার সুবর্ণ সুযোগ। তবে পাল্লেকেলের পিচ, যা সাধারণত পেসারদের জন্য সহায়ক এবং উচ্চ রানের স্কোর সমর্থন করে, বাংলাদেশের বোলারদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এছাড়া, ম্যাচের দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় খেলা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে, যা গত পাঁচটি ওয়ানডেতে এই মাঠে ঘটেছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ দলে একটি পরিবর্তন এনেছে। পেসার হাসান মাহমুদের পরিবর্তে একাদশে ফিরেছেন অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদ, যিনি প্রথম ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন। তাসকিনের ফিরে আসা বাংলাদেশের পেস আক্রমণকে আরও শক্তিশালী করবে, বিশেষ করে মোস্তাফিজুর রহমান এবং তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে মিলে। দ্বিতীয় ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক হওয়া বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামও এই ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিংয়ের প্রধান অস্ত্র হতে পারেন। তানভীরের সঠিক লাইন-লেংথ এবং ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডারের জন্য হুমকি হতে পারে। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ইকোনমিক্যাল বোলিং এবং শামীম হোসেনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
শ্রীলঙ্কা তাদের অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের বোলিং আক্রমণে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এবং মহেশ থিকশানার স্পিন জুটি বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথম ম্যাচে হাসারাঙ্গা চার উইকেট এবং কামিন্দু মেন্ডিস তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধসের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। পেসার আসিথা ফার্নান্দো, যিনি দ্বিতীয় ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন, এবং দুষ্মন্ত চামিরার গতি পাল্লেকেলের পিচে কার্যকর হতে পারে। ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার শক্তি হলেন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা, যিনি প্রথম ম্যাচে ১০৬ রানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন, এবং কুশল মেন্ডিস, যিনি দ্বিতীয় ম্যাচে ২০ বলে অর্ধশত রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন। জানিথ লিয়ানাগের মিডল অর্ডারে ধারাবাহিকতা এবং পাথুম নিশাঙ্কার ওপেনিং বাংলাদেশের বোলারদের জন্য পরীক্ষা হবে।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস, যেখানে তারা ১০০/১ থেকে ১০৫/৮-এ নেমে গিয়েছিল, দলের জন্য একটি বড় শিক্ষা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে পারভেজ হোসেন ইমন এবং তাওহিদ হৃদয়ের অর্ধশত রান এবং তানজিম হাসানের দেরিতে কিছু আঘাত বাংলাদেশকে ২৪৮ রানের লড়াকু স্কোরে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল। তানভীর ইসলামের পাঁচ উইকেট এবং মোস্তাফিজুরের শেষ ওভারে শান্ত বোলিং শ্রীলঙ্কার চেজকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। এই ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের দায়িত্ব হবে শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে প্রথম থেকেই চাপে রাখা। তাসকিন আহমেদের ফিরে আসার ফলে পেস আক্রমণে নতুন গতি যোগ হবে, এবং মোস্তাফিজুরের ডেথ ওভারে ধীরগতির বল এবং তানজিমের আগ্রাসী বোলিং শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। তানভীর ইসলামের স্পিন এবং শামীম হোসেনের অফ-স্পিন পাল্লেকেলের পিচে কার্যকর হতে পারে, যদিও এই মাঠে পেসাররা বেশি সুবিধা পায়।
বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ দ্বিতীয় ম্যাচের পর জানিয়েছিলেন, ২৪৮ রানের স্কোর যথেষ্ট ছিল, এবং তাঁর দল চাপের মুহূর্তে ধৈর্য ধরে খেলেছে। তিনি তানভীর ইসলামের প্রশংসা করে বলেন, তাঁর নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছে। তবে মেহেদী নিজের ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ তিনি টানা কয়েকটি ম্যাচে রান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন ইমন এবং তাওহিদ হৃদয়ের ওপর বড় দায়িত্ব থাকবে। নাজমুল হোসেন শান্ত, যিনি প্রথম দুই ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েও রানে রূপান্তর করতে পারেননি, তাঁর কাছ থেকে একটি বড় ইনিংস প্রত্যাশিত। জাকের আলী এবং শামীম হোসেনের মিডল অর্ডারে ধারাবাহিকতা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁদের ব্যাটিংয়ে ধীরগতি এবং মিডল অর্ডারের ধসই হারের কারণ। কুশল মেন্ডিসের বিস্ফোরক শুরুর পরও জানিথ লিয়ানাগের লড়াই সত্ত্বেও তারা ১৬ রানে হেরে যায়। এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা তাদের ব্যাটিংয়ে আরও ধারাবাহিকতা আনতে চাইবে। পাল্লেকেলের উচ্চ রানের পিচে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা বড় স্কোর করতে মরিয়া থাকবে, এবং বাংলাদেশের বোলারদের দায়িত্ব হবে তাদের প্রথম দিকে উইকেট শিকার করে চাপে রাখা।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী টপ অর্ডারকে দ্রুত আউট করা। তাসকিন আহমেদের গতি এবং মোস্তাফিজুরের ভ্যারিয়েশন পাওয়ারপ্লেতে গুরুত্বপূর্ণ হবে। তানভীর ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন মিডল ওভারে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শামীম হোসেন, যিনি দ্বিতীয় ম্যাচে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, তাঁর বোলিংও দলের জন্য অতিরিক্ত শক্তি যোগ করবে। তবে, বৃষ্টির পূর্বাভাস এবং পাল্লেকেলের পিচের বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই ম্যাচ শুধু সিরিজ জয়ের জন্যই নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। টাইগারদের বোলিং শক্তি এবং দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই ম্যাচে তাদের জয়ের চাবিকাঠি হতে পারে।