প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । আজকের খবর অনলাইন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে মাদকবিরোধী অভিযানে গাঁজা সেবনের সময় ৯ শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা বিভাগ। বুধবার (২৫ জুন) রাত ৮টার দিকে কলা অনুষদের ক্যান্টিনের ছাদ ও নিকটবর্তী ঝরনার পাশ থেকে অভিযুক্তদের আটক করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে অভিযান চালিয়ে এই শিক্ষার্থীদের ধরা হয়েছে এবং ঘটনাটি ইতোমধ্যে যথাযথ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপের আওতায় আনা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন জানান, অভিযানের সময় দুইটি পৃথক স্থানে অবস্থানরত দুইটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ছিলেন অভিযুক্তরা। একটি গ্রুপে পাঁচজন এবং অন্যটিতে চারজন ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। আটকদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও তিনজন নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।
অভিযানে সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের বিষয়ে গোপন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কলা অনুষদ সংলগ্ন এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়। এরপর বুধবার রাতে অভিযানে গিয়ে কলা অনুষদের ক্যান্টিনের ছাদ ও ‘কলা ঝুপড়ি’ নামে পরিচিত স্থানের পাশের ঝরনার কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের গাঁজা সেবনের সময় হাতেনাতে ধরা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্যমতে, আটকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে এবং তাদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য নিজ নিজ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সহকারী প্রক্টর আরও বলেন, “বর্তমান প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং এটি বাস্তবায়নে আমরা কঠোরভাবে কাজ করছি। এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করেছেন শুধুমাত্র মুচলেকা ও কাউন্সেলিংয়ের মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখার কারণে। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় আরও কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক মনে করছেন, এটি নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং সামগ্রিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকাসক্তির একটি ভয়ের সংকেত। একাধিক বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এই প্রবণতা প্রতিরোধে শুধু প্রশাসনিক অভিযান নয়, প্রয়োজন সমন্বিত শিক্ষামূলক কর্মসূচি ও মনোসামাজিক কাউন্সেলিং।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরণের ঘটনা শুধু প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করে না, বরং সামগ্রিকভাবে শিক্ষাঙ্গনে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এক স্পষ্ট বার্তা দেয়। প্রশাসনের কড়া নজরদারি ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সহজ হবে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে নিয়মিত অভিযান আরও জোরদার করা হবে এবং গোপন নজরদারির ব্যবস্থা করা হবে যাতে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নৈতিকতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথাও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে।