প্রকাশ: ১৭ই জুন ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্সের এক গোপন প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, যা ইরানের সেনাপ্রধান জেনারেল বাঘেরি হত্যাকাণ্ডের পিছনে কাজ করা জটিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে অজান্তে ব্যবহার করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
গত ২৭ মে জেনারেল বাঘেরি পাকিস্তান সফরে গেলে পাকিস্তানি সেনাপ্রধান তাকে একটি হাতঘড়ি উপহার দেন। এই ঘড়িটিই পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের মূল হাতিয়ারে পরিণত হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঘড়িটিতে একটি অত্যাধুনিক জিপিএস ট্রান্সপন্ডার লাগানো ছিল, যা জেনারেল বাঘেরির অবস্থান সঠিকভাবে ট্র্যাক করছিল। এই তথ্য ব্যবহার করেই ইসরায়েলি বাহিনী পিনপয়েন্ট অ্যাকুরেসি নিয়ে তার বেডরুমে মিসাইল হামলা চালায়।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তানি সেনাপ্রধান কি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কোনোভাবে জড়িত? বিশেষজ্ঞদের মতে, এরকম উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সাধারণত নিজেরা কেনাকাটা করেন না, বরং তাদের অফিসের কর্মচারীরা এই ধরনের উপহারের ব্যবস্থা করে থাকেন। মোসাদ সম্ভবত এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাদের এজেন্টের মাধ্যমে ঘড়িটি সরবরাহ করিয়েছে।
ঘটনার আরেকটি মাত্রা যোগ করেছে ইরানের চাবাহার বন্দর। গত বছর এই বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটি ভারতীয় কোম্পানিকে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই কোম্পানিটি আসলে মোসাদের একটি ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠান ছিল। ভারতীয় কর্মীদের ছদ্মবেশে মোসাদের এজেন্টরা বন্দরটিকে ইসরায়েলি ড্রোন ও সামরিক সরঞ্জাম প্রবেশের জন্য ব্যবহার করেছে।
এই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. আহমেদ রিয়াজ বলেন, “ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে গত এক দশক ধরে একটি কৌশলগত জোট গড়ে উঠেছে। দুটি দেশই মুসলিম বিশ্বকে দুর্বল করতে একসাথে কাজ করছে, যদিও তাদের পদ্ধতি ভিন্ন।”
ইরানের গোয়েন্দা বাহিনী গতকাল এই নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়ে ৭৩ জন ভারতীয়কে গ্রেফতার করেছে, যাদের মোসাদের এজেন্ট বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই গ্রেফতারের পর ইরান-ভারত সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ইসলামাবাদের এক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং যদি কোনো পাকিস্তানি কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে গোয়েন্দা যুদ্ধের নীতিশাস্ত্র নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের পরোক্ষ হামলা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে এবং ইসরায়েল ও ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে, তেল আবিব ও নয়াদিল্লি এই অভিযোগগুলোকে ‘অহেতুক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
এই ঘটনা বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা বয়ে এনেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এই ধরনের সূক্ষ্ম কিন্তু মারাত্মক কার্যক্রম সম্পর্কে সব দেশকেই সতর্ক থাকতে হবে।
এই প্রতিবেদন প্রণয়নে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সূত্র, ব্রিটিশ মিডিয়া রিপোর্ট এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতামত বিবেচনা করা হয়েছে। সংবাদটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে উপস্থাপন করা হয়েছে।