প্রকাশ: ০৮ জুলাই, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ গত কয়েক বছরে দর্শকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই সিরিয়ালটি চারটি সফল সিজনের মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। একদল তরুণ ব্যাচেলরের জীবনের নানা হাস্যরসাত্মক ও বাস্তবধর্মী গল্প নিয়ে নির্মিত এই ধারাবাহিক প্রতিটি পর্বে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। তবে, সম্প্রতি এই সিরিয়ালের পঞ্চম সিজনের কিছু পর্বে অশ্লীলতা, সামাজিক অবক্ষয় এবং নৈতিক বিচ্যুতির অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি, অভিনেতা মারজুক রাসেল, জিয়াউল হক পলাশ, সাইদুর রহমান পাভেল, শিমুল শর্মা এবং প্রযোজনা সংস্থা বুম ফিল্মস প্রোডাকশন হাউজের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহি উদ্দিন (শামীম) মঙ্গলবার এই নোটিশ পাঠিয়েছেন, যা তিনি নিজেই গণমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেছেন।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিরিয়ালের পঞ্চম সিজনের ১ থেকে ৮ নম্বর পর্বে এমন কিছু সংলাপ ও দৃশ্য রয়েছে, যা অশ্লীল, দ্বৈত অর্থবোধক এবং সমাজের কিশোর-তরুণদের মানসিকতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নোটিশে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নাটকের সংলাপে ‘ডেট’, ‘উনিশ/বিশ’, ‘টাকা হলে শিশা খেতে পারতাম’, ‘ফিমেল’, ‘কিডনি’ এবং ‘দই’ শব্দের ব্যবহার এমনভাবে করা হয়েছে, যা সামাজিক শালীনতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এই সংলাপগুলো তরুণদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নোটিশে আরও দাবি করা হয়েছে, এই ধরনের সংলাপ নারীদের প্রতি অবমাননাকর এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতি হুমকিস্বরূপ।
আইনজীবী মহি উদ্দিন তাঁর নোটিশে আরও উল্লেখ করেছেন, নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ এখন সব বয়সের দর্শকদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। তবে নাটকের ভাষা, উপস্থাপনা এবং বিষয়বস্তু কোনোভাবেই পরিবারবান্ধব নয়। এই ধারাবাহিকের বিষয়বস্তু জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ এবং জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭-এর বিধান লঙ্ঘন করছে। এই নীতিমালাগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শিশু ও কিশোরদের মানসিক গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনো কনটেন্ট প্রচার করা যাবে না। তবুও ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিরিয়ালের বিতর্কিত সংলাপ ও দৃশ্যগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে কিশোর-তরুণদের আচরণ ও ভাষার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এই আইনি নোটিশে সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিতর্কিত সংলাপ ও ভিডিওগুলো সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায়, আইনজীবী মহি উদ্দিন আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের কনটেন্ট শুধু সামাজিক মূল্যবোধই নয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি আরও জানান, এই ধরনের সংলাপ কিশোর-তরুণদের মাঝে অশ্লীল ভাষা ও আচরণের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে, যা দীর্ঘমেয়াদে সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিরিয়ালটি বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকের ক্ষেত্রে একটি অনন্য স্থান অধিকার করেছে। এর হাস্যরস, বাস্তবধর্মী গল্প এবং তরুণ প্রজন্মের জীবনযাত্রার প্রতিফলন দর্শকদের কাছে ব ব্যাচেলর পয়েন্ট সিরিজটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে পঞ্চম সিজনের কিছু সংলাপ ও দৃশ্য নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। এর আগেও এই ধারাবাহিক বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে। নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি সিরিয়ালটি নিয়ে বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি জানান, অনেক সময় বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন এবং সিরিয়াল বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। তবে তিনি সবসময় সততার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছেন এবং দর্শকদের ফিডব্যাককে গুরুত্ব দিয়েছেন।
এই আইনি নোটিশের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে, কিছু দর্শক মনে করেন, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ তরুণদের জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরে এবং এর সংলাপগুলো হাস্যরসের অংশ। তারা মনে করেন, এই ধরনের নাটক তরুণদের বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে, সমালোচকরা মনে করেন, সিরিয়ালের কিছু সংলাপ ও দৃশ্য সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে এবং তরুণদের মাঝে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে, নাটকের কিছু সংলাপ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এগুলো কিশোর-তরুণদের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, যা সমাজে নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিল্পে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। এর জনপ্রিয়তা এবং দর্শকপ্রিয়তা নির্মাতা ও অভিনেতাদের জন্য গর্বের বিষয়। তবে এই ধরনের আইনি নোটিশ এবং বিতর্ক সিরিয়ালের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি এবং তাঁর দল এই নোটিশের জবাবে কী পদক্ষেপ নেবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এনেছে। গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা নির্মাতাদের আরও সতর্কতার সঙ্গে কনটেন্ট তৈরি করতে উৎসাহিত করবে, যাতে সামাজিক মূল্যবোধ এবং নীতিমালার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা যায়।
আইনি নোটিশে উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে বিতর্কিত কনটেন্ট সরিয়ে নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দর্শক ও শিল্পসংশ্লিষ্টদের মাঝে কৌতূহল রয়েছে। এই ঘটনা কাজল আরেফিন অমি এবং তাঁর দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, এটি বাংলাদেশের নাটক ও গণমাধ্যম শিল্পে দায়বদ্ধতা ও সৃজনশীলতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছে।