শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

কুয়েতের নতুন ই-ভিসা: পর্যটন ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
  • ৩ বার
কুয়েতের নতুন ই-ভিসা: পর্যটন ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার

প্রকাশ: ০৮ জুলাই, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত নতুন ই-ভিসা ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে পর্যটন, বাণিজ্য এবং পারিবারিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ডিজিটাল ভিসা ব্যবস্থা বিদেশি পর্যটক, প্রবাসী এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের জন্য কুয়েতে প্রবেশ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, দ্রুত এবং স্বচ্ছ করবে। বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের জন্য এটি বিশেষভাবে একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, এই ই-ভিসা ব্যবস্থা পর্যটন, পারিবারিক ভ্রমণ, বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং সরকারি প্রতিনিধিদলের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা প্রদান করবে। এই পদক্ষেপ কুয়েতের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

নতুন ই-ভিসা ব্যবস্থার আওতায় পর্যটন ভিসার মেয়াদ ৯০ দিন এবং পারিবারিক ও বাণিজ্যিক ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আবেদনকারীরা ঘরে বসেই অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন, যা পূর্বের কাগজপত্র-নির্ভর দাফতরিক প্রক্রিয়ার জটিলতাকে অনেকাংশে কমিয়ে দেবে। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে এবং আবেদনকারীদের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। এই উদ্যোগ কুয়েতের পর্যটন শিল্পকে আরও প্রসারিত করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কুয়েতের এই নতুন ই-ভিসা ব্যবস্থা বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। উপসাগরীয় অঞ্চলে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এই ই-ভিসা ব্যবস্থা তাদের জন্য ব্যবসায়িক সুযোগ সম্প্রসারণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বাহরাইন বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সভাপতি আইনুল হক সরকার জানিয়েছেন, কুয়েতের এই উদ্যোগের ফলে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও গভীর হবে। তিনি বলেন, ছয়টি উপসাগরীয় দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশি পণ্য মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আরও বেশি পরিমাণে রপ্তানির পথ সুগম করবে।

কুয়েত বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি লুৎফর রহমান মুখাই আলী এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার এটি একটি উপযুক্ত সময়। তিনি মনে করেন, এই ই-ভিসা ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, কৃষিজাত পণ্য এবং প্রযুক্তি পণ্য মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আরও সহজে প্রবেশ করতে পারবে। এটি বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও জানান, এই ব্যবস্থা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং কুয়েতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।

কুয়েত শিগগিরই জিসিসি (গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল) গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা পদ্ধতিতে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা ছয়টি উপসাগরীয় দেশ—সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন এবং ওমান—এর মধ্যে একটি একক ভিসার মাধ্যমে অবাধ চলাচলের সুযোগ দেবে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশি পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের একাধিক দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা এবং পর্যটনের সুযোগকে আরও সহজ করবে। জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে তাদের পণ্য ও সেবার প্রসার ঘটাতে পারবেন। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশের প্রবাসী সম্প্রদায়ের জন্যও এই ই-ভিসা ব্যবস্থা একটি বড় সুযোগ। কুয়েতে বর্তমানে আড়াই লাখেরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী বসবাস করছেন, যারা দেশটির অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। নতুন ই-ভিসা ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের পরিবারের সদস্যরা সহজেই কুয়েতে ভ্রমণ করতে পারবেন, যা প্রবাসীদের সামাজিক ও পারিবারিক সংযোগকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে, কুয়েত সরকার কিছু শর্ত আরোপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, পারিবারিক ভিসার জন্য আবেদনকারীদের ন্যূনতম মাসিক আয় ৪০০ কুয়েতি দিনার হতে হবে। এছাড়া, বাণিজ্যিক ভিসার ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের যথাযথ একাডেমিক বা পেশাগত যোগ্যতা এবং কুয়েতি কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে হবে।

কুয়েতের অর্থনীতি অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটির মোট ৪৬ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩২ লাখই বিভিন্ন দেশের অভিবাসী। এই প্রেক্ষাপটে, নতুন ই-ভিসা ব্যবস্থা কুয়েতের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে সাহায্য করবে। তবে, কুয়েত সরকার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি অবলম্বন করে থাকে। সম্প্রতি দেশটি প্রবাসী কর্মীদের জন্য নতুন নিয়ম জারি করেছে, যার মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের আগে নিয়োগকর্তার অনুমতি নেওয়ার শর্তও রয়েছে। এই নিয়ম আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এছাড়া, কুয়েতে ভিসা বাণিজ্য সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এর সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে বহু প্রবাসীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ই-ভিসা ব্যবস্থা দেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতি রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, এবং কুয়েতের মতো ধনী দেশে ব্যবসায়িক ও পর্যটন সুযোগ বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করবে এবং বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। তবে, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পেশাগত দক্ষতা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

কুয়েতের নতুন ই-ভিসা ব্যবস্থা এবং জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসার সম্ভাবনা বাংলাদেশের পর্যটন ও বাণিজ্য খাতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। এটি শুধু ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের জন্যই নয়, বাংলাদেশের প্রবাসী সম্প্রদায়ের জন্যও একটি সুখবর। সরকার এবং বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫