শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

পাকিস্তানে টানা বর্ষণে বিপর্যয়: বন্যায় নিহত ১৯, বহু জেলা ক্ষতিগ্রস্ত

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
  • ২ বার
পাকিস্তানে টানা বর্ষণে বিপর্যয়: বন্যায় নিহত ১৯, বহু জেলা ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

পাকিস্তানে টানা বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশের কয়েকটি অঞ্চল। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া, ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ১০ জুলাই পর্যন্ত মূল নদীগুলোর জলাধার অঞ্চলজুড়ে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে, যা আরও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতির ঘাটতি যেন না থাকে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারির কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বেলুচিস্তান প্রদেশে গত ৪৮ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিপাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, রাজ্যের অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ঝড়ো বাতাস ও তীব্র বর্ষণে বেশ কিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও ২২টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বেলুচিস্তানের আওয়ারান, ঝাল মাগসি, খুজদার, মুসাখাইল, কিলা সাইফুল্লাহ, বারখান, কোলু, লোরালাই, ঝোব ও শেরানি জেলার কিছু অংশ ভয়াবহ বৃষ্টিপাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই জেলাগুলোর উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলজুড়ে টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় নদনদী ও খাল-বিল উপচে পড়ায় বহু এলাকায় হঠাৎ করে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক স্থানে। বিদ্যুৎ সরবরাহও ব্যাহত হচ্ছে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন শত শত পরিবার, যাদের অনেকেই বর্তমানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

এদিকে খাইবার পাখতুনখোয়া, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদেও প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব এলাকায় সড়কে জলাবদ্ধতা এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ি অঞ্চলে ধসের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

জাতীয় জরুরি পরিচালনা কেন্দ্র ও এনডিএমএ দেশের জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জরুরি সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উদ্ধারকারী দল, স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ মুহূর্তে পাকিস্তানজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নাগরিক মহলে এক ধরনের উদ্বেগ বিরাজ করছে—বর্ষা মৌসুমের পুরোটা জুড়ে যদি এমন দুর্যোগ চলতেই থাকে, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। বিশেষ করে দুর্বল অবকাঠামো এবং অপর্যাপ্ত পরিকল্পনার কারণে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হবেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে দুর্যোগপীড়িত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা শুরু করেছে। তবে পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ত্রাণ বিতরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলোও।

সরকারের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্ষা মৌসুমে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি এবং বন্যা পূর্বাভাস প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও বলা হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো—প্রতিবছরের মতো এবারও আগাম প্রস্তুতির ঘাটতি এবং দুর্বল অবকাঠামোই বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাকিস্তানজুড়ে চলমান এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকার, প্রশাসন ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ এখন সবচেয়ে জরুরি। সময়মতো সহায়তা না পৌঁছালে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পর্যবেক্ষক মহল।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫