শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

নীরবতার আড়ালে সংরক্ষিত বিবেক: প্রধানমন্ত্রীর কাছে গুম প্রত্যাখ্যানের চিঠি

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৪০ বার

প্রকাশ: ২৭শে জুন, ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

গুম-সংক্রান্ত অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ২৫শে জুন প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি ঘিরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যে তথ্যটি উঠে এসেছে, তা হলো—র‌্যাবের কিছু কর্মকর্তা যাঁরা বেআইনি অপারেশনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, তাঁদের ব্যক্তিগত, হাতে লেখা চিঠি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল এবং সেগুলো তিনি দীর্ঘ এক দশক ধরে নিজের ব্যক্তিগত ফাইলে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।

এই চিঠিগুলো গণভবনের এক পরিত্যক্ত ফাইলপত্রের স্তূপে পাওয়া যায় ২০২৫ সালের ৫ আগস্টের পর, তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধান চলাকালে। তদন্তকারীরা বলেন, চিঠিগুলোতে সংশ্লিষ্ট র‌্যাব সদস্যরা স্পষ্ট ভাষায় বেআইনি অভিযান, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজেদের বিবেক ও নৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন। এ ধরনের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি তৎকালীন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বিবেকের দ্বন্দ্ব ও ব্যতিক্রমী মানবিক প্রতিক্রিয়ার একটি অস্পষ্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা এই চিঠিগুলো তার প্রধানমন্ত্রিত্বকালীন সময়ের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখেন এবং এগুলোর বিষয়ে কোনোরূপ আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এর অর্থ, সেই সময় বিচারবহির্ভূত কার্যক্রমে প্রত্যাখ্যানকারী কর্মকর্তারা কেউ কেউ শাস্তি না পেয়েই পেশাগতভাবে টিকে ছিলেন। বিষয়টি প্রশাসনের অভ্যন্তরে দায়িত্বশীল অবস্থানের কিছু ব্যতিক্রমী নজিরকে তুলে ধরে, যেখানে সরাসরি ‘না’ বলার সাহস দেখানো সম্ভব হয়েছিল।

কমিশনের পর্যবেক্ষণে আরও উল্লেখ করা হয়, যদিও গুমের আদেশ কিংবা অনুমোদন সম্পর্কে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কতটা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তা পুরোপুরি নিশ্চিত করা এখনো সম্ভব হয়নি, তবে এই চিঠিগুলো তাঁর অবগতির বিষয়টি স্পষ্ট করে। এটি নতুন করে প্রশ্ন তোলে—রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তরের নীরবতা বা নির্লিপ্ততা কীভাবে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিবেশ তৈরি করেছিল।

তদন্তে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, “এই ধরনের ব্যক্তিগত চিঠি, যার একাধিকটি হাতের লেখায় লেখা, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো এবং তাঁর তা গোপনে সংরক্ষণ করা আমাদের বিস্মিত করেছে। প্রশ্ন জাগে—এগুলো সংরক্ষণের পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল? শাস্তি না দিয়ে সংরক্ষণ কি নৈতিক অবস্থানকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত, নাকি এটি ছিল কেবল নীরব প্রত্যক্ষদর্শীর দায় এড়ানোর কৌশল?”

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই নতুন তথ্যকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছে, এ ধরনের প্রমাণ রাষ্ট্রীয় অপরাধের জবাবদিহিতার দাবিকে আরও শক্তিশালী করে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যেই এই রিপোর্টের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এর পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ এবং আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ভবিষ্যতের কোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল বা মানবাধিকার আদালতে এই চিঠিগুলো হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা নির্দেশ করে যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো অপরাধের তথ্য তৎকালীন শাসকের গোচরে ছিল এবং তিনি তা জানতেন।

সব মিলিয়ে এই অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নথিপত্রে গুম অস্বীকারকারীদের চিঠি থাকা এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণের ঘটনা একদিকে যেমন প্রশাসনের ভেতরের নৈতিক দ্বন্দ্বকে তুলে ধরছে, তেমনি রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহার ও নীরবতায় অনুমোদনের ধারাও স্পষ্ট করছে। এই রিপোর্টের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ প্রকাশের পর আরও বহু অজানা তথ্য দেশের সামনে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আজকের খবর অনলাইন বিষয়টির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫