প্রকাশ: ২৭শে জুন, ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের পরিণতিতে ইসরায়েলকে বর্তমানে ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিপুল আর্থিক ক্ষতি শুধু সামরিক খাতেই নয়, বরং নাগরিক অবকাঠামো, বাসস্থান, যানবাহন ও বাণিজ্যিক স্থাপনাতেও পড়েছে সর্বগ্রাসী প্রভাব। সরকারি ক্ষতিপূরণ তহবিলে ইতিমধ্যেই ৪১ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের বসবাস তেল আবিব শহরে।
তেল আবিব ছিল এবারের সংঘর্ষে অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে শহরের বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি তথ্যমতে, একমাত্র তেল আবিব থেকেই ক্ষতিপূরণের জন্য ২৬ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়েছে। যার একটি বিশাল অংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে দাখিল হয়েছে। এই মুহূর্তে ক্ষতিপূরণ ফাইলগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
পুরো দেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক স্থাপনার জন্য জমা পড়েছে প্রায় ৩৩ হাজার আবেদন। এর বাইরে ব্যক্তিগত গাড়ি, ছোট-বড় যানবাহন এবং কৃষি ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ক্ষতির জন্য জমা পড়েছে আরও প্রায় ৮ হাজার আবেদন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মতে, এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে বড় নাগরিক অবকাঠামোগত ক্ষতির উদাহরণ।
সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চলমান এই সংঘর্ষ শুধু ইসরায়েল নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক বীমা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও নাগরিকদের সাথে সমন্বয় শুরু করেছে, যদিও অনেকেই বীমার আওতায় ছিলেন না বলে সরকারি সহায়তার ওপরই এখন প্রধান নির্ভরতা তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল সরকার বিশেষ ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য অর্থ বরাদ্দ ছাড়াও, আবাসন মেরামত, যানবাহন পুনর্গঠন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দ্রুত সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষত যেসব নাগরিক যুদ্ধের সময় নিজ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের পুনর্বাসনও এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মহলেও এই ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির দায় তাদের কাঁধে নিতে হবে। যদিও সরকারি মুখপাত্ররা বারবার বলছেন, একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেও নাগরিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকারের উপস্থিতি সর্বাত্মক থাকবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন শুধু ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়ায় নয়, বরং যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের প্রস্তুতি ও মানবিক দিকগুলোর প্রতিও নিবদ্ধ। কূটনৈতিক মহল বলছে, এই ধরণের বিপর্যয়ের পর পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরা শুধু অর্থনৈতিক শক্তির ওপর নয়, বরং প্রশাসনিক দক্ষতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও নির্ভর করে।
ইসরায়েলি নাগরিকদের অনেকেই এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। আবাসিক ভবনের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অনেকেই জানাচ্ছেন, তারা শুধুই ক্ষতিপূরণ চান না, চান দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা। তবে সে প্রত্যাশা কতটা পূরণ হবে, তা নির্ভর করছে পরবর্তী দিনগুলোতে সরকারের কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাত্রার ওপর।