শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

সংঘাতের পর নতুন প্রশ্ন: কী পথ বেছে নেবে ইরান?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৮ বার
সংঘাতের পর নতুন প্রশ্ন: কী পথ বেছে নেবে ইরান?

প্রকাশ: ২৭শে জুন ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক । আজকের খবর অনলাইন

দুই সপ্তাহের টানা সংঘাত শেষে আপাত যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে থেমেছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা। কিন্তু সংঘর্ষের মূল ইস্যু, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আদৌ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলার মধ্য দিয়ে দেশটির কর্মসূচিকে কার্যত ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তবে তেহরানের পক্ষ থেকে এমন দাবির তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র “উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।”

যদিও এই মুহূর্তে উভয় পক্ষ সংঘর্ষ বন্ধে সম্মত হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি এখনও বেশ অনিশ্চিত ও উদ্বেগজনক। বিশেষ করে ইরান কী কৌশল নিচ্ছে বা নেবে, তা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। যুদ্ধের কারণে সামরিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়লেও ইরান দৃশ্যত টিকে গেছে—এটাই তাদের প্রধান অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু টিকে থাকার পর কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে দেশটি? সম্ভাব্য পথ হিসেবে উঠে আসছে সামরিক শক্তি পুনর্গঠন, পরমাণু সক্ষমতার নতুন অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নিজেকে সামরিকভাবে পুনর্গঠন করা। তুরস্কভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মুরাত আসলান মনে করেন, সামরিক ক্ষয়ক্ষতির পর ইরান এখন রাশিয়া ও চীনের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবে। তাঁর মতে, ইরান প্রথমত অভ্যন্তরীণ বিভাজন মেটাতে চায়, দ্বিতীয়ত রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নত যুদ্ধবিমান—বিশেষ করে এসইউ-৩৫ সংগ্রহে আগ্রহী, এবং তৃতীয়ত চীন থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, রাডার ও আধুনিক অস্ত্র কেনার পরিকল্পনায় আছে। কিন্তু এসব উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ইরানকে রীতিমতো বিপাকে ফেলবে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অর্থ দিয়ে অস্ত্র না কিনে ইরান জ্বালানি তেলকে বিনিময়মূল্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যা তাদের দীর্ঘদিনের কৌশল। জ্বালানি সমৃদ্ধ এই দেশটি চীন বা রাশিয়ার মতো মিত্রদের কাছে অস্ত্র চুক্তির বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ তেল সরবরাহ করতে পারে—এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাকে অনেকাংশে পাশ কাটাতে সহায়ক হবে।

অন্যদিকে, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তৈরি হয়েছে একধরনের কূটনৈতিক জটিলতা। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ফরদোসহ তিনটি প্রকল্পে বোমা হামলার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা কার্যত ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র এতটা সহজ নয়। একাধিক বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন, ইরানের প্রকল্প কেবল তিনটি কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ নয়, এবং দেশটি যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছে তা সাময়িক ধ্বংস হলেও পুনর্গঠন সম্ভব।

এছাড়া ইরানের হাতে থাকা প্রায় ৪০০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, যা দিয়ে ১০টির মতো পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব, সেটি কোথাও গোপন রাখা হয়েছে বলেও দাবি উঠেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের বরাত দিয়ে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুলিয়ান বার্গার বলেছেন, ইরান এখন এমন ধারণার কাছাকাছি যেতে পারে যে, শুধু পরমাণু অস্ত্র থাকলেই পশ্চিমা হামলা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। উত্তর কোরিয়ার পথই যেন এখানে বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তবে এই পথ বেছে নেওয়া ইরানের জন্য সহজ হবে না। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলোর তীব্র নজরদারি এবং কূটনৈতিক চাপ এখন নতুন করে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধে একাধিক মহলের জোর তৎপরতা শুরু হতে পারে। তবে তেহরান জানিয়েছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত করতে পার্লামেন্ট ইতোমধ্যেই বিল পাস করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একাধিক দিকচিহ্ন: একদিকে সামরিক পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে পরমাণু সক্ষমতা টিকিয়ে রাখার রাজনীতি এবং বিশ্ব শক্তিগুলোর সঙ্গে নতুন করে কূটনৈতিক টানাপোড়েন। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—সংঘাতের আপাত সমাপ্তি হলেও সংঘাত-উত্তর অস্থিরতা এখনো টিকেই আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫