শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

পারমাণবিক মৃত্যুর প্রথম ৬০ সেকেন্ড: এক মিনিটেই ধ্বংস, আতঙ্ক এবং অনন্ত ছায়া

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
  • ৪৮ বার

প্রকাশ: ২৩শে জুন ২০২৫ │ আজকের খবর ডেস্ক │ আজকের খবর অনলাইন ➨

মাত্র এক মিনিট—এই ক্ষুদ্র সময়কালই পুরো একটি শহরকে মুছে দিতে যথেষ্ট। আধুনিক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের প্রথম ৬০ সেকেন্ডে কী ঘটে, তার বিবরণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের দৃষ্টিতে যতটা ভয়াবহ, বাস্তবে তা তারচেয়েও বেশি বিভীষিকাময়।

ইউটিউবের একটি তথ্যচিত্র ও বিশ্বের নামকরা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র এবং সামরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একটি হাইড্রোজেন বোমা বা থারমোনিউক্লিয়ার ডিভাইস বিস্ফোরণের পর প্রথম মিনিটেই ঘটে এমন ধ্বংসযজ্ঞ, যা মানবসভ্যতার সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়গুলোর একটিতে পরিণত হতে বাধ্য।

বিস্ফোরণের প্রথম সেকেন্ডেই নেমে আসে আলোর এক তীব্র ঝলক, যাকে বলে thermal flash। এটি এতটাই উজ্জ্বল যে যারা বিস্ফোরণ থেকে ১০ কিমি দূরেও খোলা চোখে তাকিয়ে থাকবেন, তারা চিরতরে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। এই ঝলক সূর্যের পৃষ্ঠের থেকেও উত্তপ্ত—১০ কোটির বেশি ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা হাইড্রোজেন ফিউশনকে চালিত করে।

এই তাপমাত্রা মুহূর্তেই বাষ্পীভূত করে দেয় সবকিছু—মানুষ, কংক্রিট, গাড়ি, গাছপালা—সব ধূলায় পরিণত হয় বিস্ফোরণস্থল বা গ্রাউন্ড জিরোতে

এর পরের দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে আকাশে জন্ম নেয় এক বিশাল আগুনের গোলা—fireball, যা শত শত মিটার ব্যাসে বিস্তৃত হতে থাকে। যারা ১-২ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকবেন, তারা প্রায় সবাই তৃতীয় মাত্রার দগ্ধতায় আক্রান্ত হবেন, যা তাৎক্ষণিক মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

বিস্ফোরণের পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ডের মধ্যে আসে বিকট shockwave—এমন এক বায়ুচাপ, যা বাতাসকেই পরিণত করে মারাত্মক অস্ত্রে। এর ফলে আশেপাশের বহু কিলোমিটারের বিল্ডিং ধসে পড়ে, দেয়াল ভেঙে যায়, জানালা ও কাচের দরজা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বাতাসের চাপ এতটাই প্রবল হয় যে মানুষ দশ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে, অনেকের কানের পর্দা ফেটে যায়, এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

১০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে supersonic blast wave—আক্ষরিক অর্থেই শব্দের গতির চেয়েও দ্রুত বাতাসের ঢেউ। প্রতি ঘণ্টায় ১৫০০ কিমি বা তারও বেশি বেগে ছুটে আসা এই ঢেউ ভেঙে চুরমার করে দেয় বাড়িঘর, এবং বাতাসে ভাসমান কাঁচের টুকরো, লোহার খণ্ড বা পাথরের টুকরোগুলো মানুষের শরীর ভেদ করে।

এর পরের মুহূর্তে, অর্থাৎ ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ডে, বিস্ফোরণের কেন্দ্র থেকে নির্গত হয় তীব্র তেজস্ক্রিয়তা—Initial Nuclear Radiation। যারা ১ থেকে ১.৫ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকেন, তাদের দেহে এত মাত্রায় রেডিয়েশন ঢুকে পড়ে যে রেডিয়েশন সিকনেস বা রেডিয়েশন পোয়জনিং হয় তাৎক্ষণিক। এতে রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে যায়, হাড়ের মজ্জা কাজ করা বন্ধ করে দেয়, শরীর প্রচণ্ড জ্বর, বমি, রক্তক্ষরণে ভেঙে পড়ে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।

বিস্ফোরণের পর শুরু হয় firestorm—বহু কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আগুনের তাণ্ডব, যা স্থানীয় বাতাসের ঘূর্ণিকে আকর্ষণ করে নতুন করে বাতাস টেনে নিয়ে এসে আগুনকে আরও বেশি প্রসারিত করে। এতে গ্যাসলাইন, বৈদ্যুতিক তার, জ্বালানির গুদাম—সব একযোগে জ্বলে ওঠে।

এবং এর কিছু মিনিট পর থেকে শুরু হয় আরও গভীর বিপর্যয়—radioactive fallout। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সূক্ষ্ম, অদৃশ্য অথচ মারাত্মক তেজস্ক্রিয় ধুলো ও কণা। এরপর নামে ব্ল্যাক রেইন—কালো, পিচ্ছিল, কটু গন্ধযুক্ত বিষাক্ত বৃষ্টি, যাতে থাকে প্লুটোনিয়াম, ইউরেনিয়াম, সিজিয়াম, স্ট্রনশিয়াম এবং অন্যান্য প্রাণঘাতী উপাদান।

এই বৃষ্টির প্রতিটি বিন্দু শরীরে পড়া মানে জীবনের ঘড়িতে একটি বিষাক্ত কাউন্টডাউন শুরু। এই Fallout শুধু তাৎক্ষণিক মৃত্যু নয়, ভবিষ্যতের ক্যানসার, জন্মগত ত্রুটি এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের দ্বার খুলে দেয়।

একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের প্রথম এক মিনিটের ঘটনাবলী শুধু তাৎক্ষণিক ধ্বংস নয়—এটা এক দীর্ঘ, নীরব, ক্রমাগত মৃত্যুর সূচনা। এটি থেমে যায় না এক মিনিটে, বরং শুরু হয় এক ভয়াবহ উত্তর-ইতিহাস, যার ছায়া পড়ে বহু দশক ধরে।

হিরোশিমা ও নাগাসাকির অভিজ্ঞতা আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছে—এই ধরনের অস্ত্র একবার ব্যবহৃত হলে শুধু এক প্রজন্ম নয়, পুরো মানবসভ্যতা ক্ষতবিক্ষত হয়। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে, যখন পারমাণবিক উত্তেজনা বাস্তব হুমকিতে পরিণত হয়েছে, তখন এই টাইমটেবিল আমাদের মনে করিয়ে দেয়—যুদ্ধের গর্জনের চেয়েও ভয়ঙ্কর তার পরিণতি।

শান্তি কখনো যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে জন্মায় না। আর যদি জন্ম নেয়ও, তা হয় শোক, বেদনা আর ভস্ম থেকে—যার চিহ্ন থাকে মানুষের চর্মে, মাটির তলায়, আর ইতিহাসের গ্লানিতে। এখন প্রশ্ন, বিশ্ব কি এই শিক্ষা মনে রাখবে? নাকি প্রথম ৬০ সেকেন্ডই হয়ে উঠবে সভ্যতার শেষতম সময়?

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫