প্রকাশ: ২১শে জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক
ইরানের সেমনান প্রদেশে আজ সকালে ৫.১ মাত্রার একটি ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সেমনান ইরানের একটি স্ট্র্যাটেজিক এলাকা হিসেবে পরিচিত, যেখানে দেশটির প্রধান মহাকাশ ও মিসাইল পরীক্ষা কেন্দ্র অবস্থিত। এই ভূকম্পনটি প্রাকৃতিক নাকি কৃত্রিম—এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে।
২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়া যখন তাদের পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল, তখন ৬.৩ মাত্রার একটি বিস্ফোরণঘটিত ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়েছিল। আজকের ইরানের সেমনানে রেকর্ডকৃত ভূকম্পনটিও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য বহন করছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, ১০০ কিলোটন শক্তির একটি পারমাণবিক বোমা ভূগর্ভে বিস্ফোরিত হলে সাধারণত ৫ মাত্রার কাছাকাছি ভূকম্পন সৃষ্টি হয়।
সেমনান এলাকাটি ইরানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেশটির মহাকাশ কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু। এখানকার সাফির (Safir) এবং সিমোরঘ (Simorgh) রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার মাধ্যমে ইরান একাধিকবার স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। এছাড়াও, এই অঞ্চলটি ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষার জন্যও ব্যবহৃত হয়। সেমনানের মরুভূমি অঞ্চলটি জনবসতিহীন হওয়ায় এ ধরনের পরীক্ষা চালানো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে। যদিও ইরান সবসময় দাবি করে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, তবুও এই ধরনের ভূকম্পন নতুন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছে। মার্কিন ও ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই এই ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে।
ইরানের কর্তৃপক্ষ এখনও এই ভূকম্পনের কারণ সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে স্থানীয় ভূতাত্ত্বিক সংস্থাগুলো প্রাথমিকভাবে এটিকে প্রাকৃতিক ভূকম্পন বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু ভূকম্পনের গভীরতা ও অবস্থান বিশ্লেষণ করে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটি মানবসৃষ্ট বিস্ফোরণের ফলেও হতে পারে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ইরানের কাছে এই ভূকম্পনের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। সংস্থাটি ইরানের পারমাণবিক সাইটগুলোর উপর নজরদারি বাড়ানোরও পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
ইরান যদি সত্যিই কোনো গোপন পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে থাকে, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। অন্যদিকে, যদি এটি প্রকৃতই একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হয়, তাহলে ভূতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে।