প্রকাশ: ২০শে জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে ইরান তাদের অস্ত্রভাণ্ডার থেকে এক নতুন ও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ওয়ারহেড ব্যবহারের মাধ্যমে এক বৈপ্লবিক সামরিক কৌশল প্রদর্শন করেছে। ইসরায়েলের অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ও সামরিক বিশ্লেষক ওফির কোহেন এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান যে, ইরান আজ যে হামলা চালিয়েছে, তাতে ব্যবহৃত হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক ওয়ারহেড—যেটি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের পর একটানা বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে আকাশেই ছড়িয়ে গিয়ে বহু ছোট ছোট সাবমিউনিশনে বিভক্ত হয়ে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে আঘাত হানে।
এই ওয়ারহেডটি ইরানের সর্বশেষ সংস্করণের Khorramshahr-4 ক্ষেপণাস্ত্রে সংযুক্ত করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্নেল কোহেন বলেন, “এই প্রযুক্তি প্রথাগত ওয়ারহেডের তুলনায় অনেক বেশি বিপজ্জনক। কারণ এটি নির্দিষ্ট একটি জায়গায় নয়, বরং বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম। এটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বিশেষ করে জনবহুল এলাকায় প্রতিক্রিয়া দেখানোকে কঠিন করে তোলে।”
এই ধরনের ওয়ারহেডকে বলা হয় ‘Multiple Separating Warhead’ বা সাব-মিউনিশন ক্যারিয়ার। এর কার্যক্ষমতা প্রথাগত ফিউজ-ভিত্তিক ওয়ারহেডের তুলনায় বেশি, কারণ এটি আকাশেই বিভক্ত হয়ে বহুগুণ ক্ষতি ঘটাতে পারে। এতে প্রতিটি সাবমিউনিশন নিজ নিজ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি প্রতিপক্ষের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে বহু জায়গায় আঘাত হানার সক্ষমতা তৈরি করে।
ইরান এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু সামরিক সুবিধা অর্জন করছে না, বরং এটি একটি ভূরাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরণের হামলা ইসরায়েল ও তার মিত্রদের জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আয়রন ডোমের মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যখন একাধিক সাব-মিসাইল বা ওয়ারহেড একই সঙ্গে হ্যান্ডেল করতে ব্যর্থ হয়, তখন আঘাত ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানানো হয়নি এই নতুন ওয়ারহেডের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা, তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যম ও নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে—তেল আবিব ও আশদোদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও শিল্প স্থাপনায় মারাত্মক আঘাত হেনেছে এই নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র।
এর মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শক্তি এই ঘটনাকে ঘিরে নিজ নিজ অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে।
তবে ইরান যে আরও আধুনিক অস্ত্র প্রয়োগের দিকেই এগোচ্ছে, এবং তারা এই সংঘাতকে শুধু প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়, বরং কৌশলগত রূপ দিতে চায়—তা এখন স্পষ্ট। খোররামশহর-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার সেটিরই এক প্রাথমিক ঝলক, যেটি ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করতে যাচ্ছে।
এই নতুন অস্ত্র-প্রযুক্তি শুধু সামরিক সাম্যাবস্থাকেই নাড়িয়ে দিয়েছে না, বরং এটি প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা কৌশলের একটি নতুন যুগের সূচনা বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষকেরা। ইরান এই যুদ্ধকে আপাতত শুধু যুদ্ধ হিসেবে দেখছে না—তারা এটি দিয়ে নিজের আধুনিক শক্তির পরিচয় ও পরাশক্তির দাবি প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবেই নিচ্ছে।