প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা
আজকের খবর অনলাইন
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির আগেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত।”
সোমবার (৩০ জুন) রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ্যানি এই বক্তব্য দেন। তার মতে, দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দেশের গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ একটি অবিলম্বে, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
এ্যানি আরও বলেন, “দেশের জনগণ রাজনৈতিক দিশাহীনতায় ভুগছে। একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।” তাঁর বক্তব্যে তারেক রহমান এবং নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি বলেন, “তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ জাতির মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।”
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (Proportional Representation – PR) প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের প্রতিফলন ব্যতীত যেকোনো বিকল্প পদ্ধতি আমরা প্রত্যাখ্যান করবো। বিএনপি ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ পদ্ধতি মেনে নেবে না।” এ বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল কঠোর ও অনড়, যা বিএনপির ভবিষ্যৎ অবস্থান সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক আরও অভিযোগ করেন, “একটি রাজনৈতিক দল সুকৌশলে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করছে। প্রশাসনিক চাপে এবং মামলার ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে নিশ্চুপ রাখার চেষ্টা চলছে, কিন্তু ধমক দিয়ে বা ষড়যন্ত্র করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ঠেকানো যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “যখন নির্বাচন না হওয়ার অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে, তখন হঠাৎ করেই দেখা যাচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) এবং এপিএসরা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা ভয়াবহভাবে বাড়ছে, অথচ নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই।”
জয়নুল আবদিন ফারুক নির্বাচন না হওয়াকে জাতীয় দুর্ভাগ্য আখ্যা দিয়ে বলেন, “১১ মাস হয়ে গেলেও জাতি এখনো জানে না তারা কখন ভোট দিতে পারবে। এই অনিশ্চয়তা পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ।”
সভায় ওলামা দলের নেতারা বলেন, “গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চলছে।” তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দেশে নির্বাচন না হলে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে সরকারের সঙ্গে বিরোধী জোটের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। বিশেষ করে তারেক রহমান ও মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিশ্লেষণের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি এখন তার অবস্থান আরও স্পষ্ট করছে এবং নির্বাচনকালীন সরকার ও ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্বের তুলনায় কৌশলী এবং ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসছে।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে এবং নির্বাচন কমিশনের অবস্থান কী হয়, তা পরবর্তী দিনগুলোতে দেশের রাজনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে নিয়ে যেতে পারে। তবে এ্যানির স্পষ্ট উচ্চারণে এটা পরিষ্কার—বিএনপি আর সময়ক্ষেপণের পক্ষে নেই এবং তারা চায়, জাতীয় নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির আগেই হোক, নতুবা সংকট আরও গভীর হবে।