প্রকাশ: ২৭শে জুন ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক
আজকের খবর অনলাইন
ইউক্রেন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি করার উদ্যোগ নিচ্ছে। অভিযোগ—রাশিয়ার অধিকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে অবৈধভাবে সংগৃহীত গম বাংলাদেশে রপ্তানি হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে ‘চুরি হওয়া গম’ হিসেবে চিহ্নিত। ইউক্রেনের দাবি, তারা এ বিষয়ে একাধিকবার সতর্কতা জারি করলেও বাংলাদেশ কোনো জবাব দেয়নি। এই প্রেক্ষাপটেই ইউক্রেন এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ করতে যাচ্ছে।
বিশ্বখ্যাত বার্তাসংস্থা রয়টার্স শুক্রবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় ইউক্রেনের একজন শীর্ষ কূটনীতিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, ইউক্রেন তার এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে ন্যায়বিচারের প্রয়াস হিসেবে দেখছে।
ইউক্রেনের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিপ্রধান অঞ্চল থেকে গম সংগ্রহ করে সেগুলো রাশিয়া নিজেদের উৎপাদিত গমের সঙ্গে মিশিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ একটি বড় আমদানিকারক দেশ হিসেবে জড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি কিয়েভের। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে—উক্ত অঞ্চলগুলো এখন তাদের সার্বভৌম অংশ এবং সেখান থেকে গম সংগ্রহ ও রপ্তানিতে ‘চুরির কোনো প্রশ্নই ওঠে না’।
রয়টার্সের কাছে থাকা কূটনৈতিক সূত্র ও নথিপত্রে দেখা গেছে, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইউক্রেন দূতাবাস এই বছর বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে। এসব চিঠিতে রাশিয়ার কাভকাজ বন্দর থেকে আসা আনুমানিক ১ লাখ ৫০ হাজার টনের বেশি গমকে ‘চুরি হওয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু কিয়েভের ভাষ্য, ঢাকা এখনও পর্যন্ত এই চিঠিগুলোর কোনোরূপ জবাব দেয়নি।
ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্ডার পোলিশচুক রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, দখলকৃত অঞ্চল থেকে সংগৃহীত গম রুশ উৎপাদনের সঙ্গে মিশিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। আমরা এই তথ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে শেয়ার করব এবং চাইব তারা এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিক।”
পোলিশচুকের ভাষায়, “বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া না থাকা আমাদের বিস্মিত করেছে। এটি শুধু মানবাধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক নীতিমালার প্রতিও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে।”
এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এই নীরবতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ইউক্রেনের অভিযোগ ও প্রমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক জটিলতা বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ইউক্রেন যেহেতু যুদ্ধকালীন একটি জটিল প্রেক্ষাপটে এই অভিযোগ আনছে, তাই এর কূটনৈতিক গুরুত্ব যথেষ্টই জোরালো।
বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং কোনো তদন্ত চালাবে কিনা, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ ও যুদ্ধকালীন বাণিজ্যনীতি নিয়ে বিতর্কের এই নতুন অধ্যায়ে বাংলাদেশের নাম উঠে আসাটা নিঃসন্দেহে গভীর গুরুত্বের দাবিদার।