প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । আজকে খবর অনলাইন
সামাজিক ব্যবসার শক্তিকে ভবিষ্যতের বিকল্প পথ হিসেবে তুলে ধরেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার দৃঢ় বিশ্বাস—জনগণের কল্যাণে নিবেদিত এই ব্যবসার মডেল কেবল বাংলাদেশ নয়, বরং সারা বিশ্বকে বদলে দিতে পারে। শুক্রবার (২৭ জুন) সাভারের জিরাবোতে আয়োজিত ‘১৫তম সামাজিক ব্যবসা দিবস’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বর্তমান বিশ্বের কাঠামো স্বার্থপরতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, যেখানে মুনাফাই একমাত্র উদ্দেশ্য। অথচ এই পথ শেষ পর্যন্ত মানবজাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।”
বিশ্বের ৩৮টি দেশের ১৮০ জন বিদেশি প্রতিনিধি এবং এক হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে আয়োজিত এই দুই দিনব্যাপী কনভেনশনে ড. ইউনূস বলেন, “সামাজিক ব্যবসা হচ্ছে এমন এক ধারণা, যেখানে বিনিয়োগকারী লাভের অংশ নিজের জন্য রাখেন না। বরং তিনি তা পুনরায় ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন, যাতে সমস্যার সমাধান হয় এবং সমাজ উপকৃত হয়।”
অতীতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক ব্যবসা দিবস পালন করতে না পারার আক্ষেপও উঠে আসে তার বক্তব্যে। ইউনূস বলেন, “বিগত সরকারের আমলে এই দিবস পালন করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তিন শূন্যের (শূন্য দরিদ্রতা, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য কার্বন নির্গমন) বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার উদ্যোগেও বাধা এসেছে। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।”
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি মৌলিক রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ডোনেশনের মাধ্যমে নয়, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের হাতেই রয়েছে এই পরিবর্তনের চাবিকাঠি।”
নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়ে তুলতে হবে—এমন বার্তা দিয়ে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা স্বপ্ন দেখায় না। চাকরি খোঁজার বদলে আমাদের উচিত চাকরি সৃষ্টির পথ ধরা। তরুণদের মধ্যে যে সম্ভাবনা আছে, তার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।”
সামাজিক ব্যবসার এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ড. ইউনূসের বক্তব্য শুধু উদ্বুদ্ধ করেই না, বরং বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নীতির এক বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরে। দিনব্যাপী আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন, প্রদর্শন করেন বাস্তব উদাহরণ, এবং খুঁজে দেখেন কিভাবে ব্যবসা হতে পারে মানবকল্যাণের এক নির্ভরযোগ্য উপায়।
অনুষ্ঠানের পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর ও অন্তর্দৃষ্টিমূলক, যেখানে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা ও উদ্যোগের সেতুবন্ধন গড়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাটিতে আবারও প্রমাণ হলো—সামাজিক ব্যবসা শুধু তাত্ত্বিক ধারণা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক আন্দোলন, যা মানুষের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সক্ষম।