শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

বিএনপির সামনে দায়িত্বের ডাক: সময় এখন দেশ বাঁচানোর রাজনীতির

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৪ বার
বিএনপির সামনে দায়িত্বের ডাক: সময় এখন দেশ বাঁচানোর রাজনীতির

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক । আজকের খবর  অনলাইন

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিএনপি, তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে দলটির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—“দেশ বাঁচানোর রাজনীতি”। অন্তত এমনটিই মনে করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির এখন উচিত কেবল দল বাঁচানো নয়, দেশ বাঁচানোর রাজনীতি করা।

তার বক্তব্যে উঠে এসেছে রাজনীতিতে ম্যাচিউরিটি ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বিএনপির গত কিছুদিনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ। শামীম হায়দারের ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন আর বিএনপির বিরুদ্ধে আগ্রাসী নয়, বরং তারা নিজেকে মুক্ত রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছায়া থেকে। তিনি বলেন, তারা ধরে নিয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে এবং সে সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই সুসম্পর্ক গড়তে চাচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মেরুকরণ থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার। শামীম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও এখন দ্বন্দ্বে জড়ানোর মতো কাঠামো বা ব্যাকবোন নেই। তাই এমন এক সময়ে বিএনপির উচিত ঐক্যবদ্ধ, দায়িত্বশীল এবং ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতি করা।

ধর্মভিত্তিক দল জামায়াত ইসলামীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ৭১ সালের পর ব্যান করা হলেও সাত বছরের ব্যবধানে আবার রাজনীতিতে ফিরে এসেছে দলটি। ব্যান বা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কোনো দল বা মতবাদকে চিরতরে মুছে ফেলা যায় না—এমনটাই দেখিয়েছে ইতিহাস। জাসদকেও ব্যান করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তারা আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গেই জোট করে ফিরে আসে।

এই বাস্তবতার আলোকে তিনি বলেন, বিএনপির দায়িত্ব ছিল অন্য দলকে নিষিদ্ধ করার আন্দোলনের বিপরীতে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়ার—“কোনো দল যেন ব্যান না হয়।” এই রাজনৈতিক অবস্থান বিএনপির রাজনীতিকে ‘স্টেটসম্যানশিপ’-এর পথে নিতে পারত। অথচ সেই সময় দলটি বিভ্রান্ত ছিল, যার ফলে রাজনৈতিক বলটি তাদের হাত থেকে সরে গেছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একসময় ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির হুংকার ছিল সর্বত্র, সেটাই এখন অনেকটাই স্তিমিত। ফেব্রুয়ারির মধ্যেও যে কার্যকর ভূমিকা আশা করা হয়েছিল, তা দেখা যায়নি। আর এ কারণেই বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেছে।

এদিকে, সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৭১ শতাংশ ভোটারই মনে করছেন তারা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন না। এই তথ্য উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মাসুদ কামাল তার ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে। ভোটের ওপর জনগণের এই আস্থাহীনতাকে তিনি বলেন “এলার্মিং রেজাল্ট”। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে নির্বাচনকে জনগণই বিশ্বাস করে না, সেটি কীভাবে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে?”

একইসঙ্গে, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি এবং ভিন্নমত দমনের বিভিন্ন ঘটনাও এখন আলোচনায়। সাংবাদিক আনিস আলমগীর থেকে শুরু করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন—সবাই বলছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের অপরিহার্য অংশ, আর তা খর্ব হলে দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

একইদিনে, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দুর্নীতির অভিযোগ এবং আহতদের অনুদান না পাওয়া নিয়েও ঘটেছে উত্তেজনা ও অফিস ভাঙচুর। আন্দোলনে আহতদের অভিযোগ—এক বছরের মাথায়ও তারা চিকিৎসা, সহায়তা বা পুনর্বাসনের আশ্বাস বাস্তবে পাননি। ফলে ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতা নিয়ে হতাশার বিস্ফোরণ ঘটেছে।

এই সবকিছুর মাঝে বিএনপির প্রতি জনগণের প্রত্যাশা বাড়ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের মূল বিরোধী দল হিসেবে শুধু আন্দোলনের হুমকি নয়, বাস্তবভিত্তিক ও গঠনমূলক রাজনৈতিক বিকল্প দেওয়াই এখন বিএনপির মূল পরীক্ষার সময়।

এক কথায়, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে জনগণের বিশ্বাস ফেরানো এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি আস্থার সেতুবন্ধন তৈরিই এখন বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ। এখন সময় এসেছে দলীয় সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে একটি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে রাজনীতি করার—যাকে এককথায় বলা যায় “দেশ বাঁচানোর রাজনীতি”।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫