প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বসবে না বলে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ইরান। তেহরান কাতার ও ওমানের মধ্যস্থতাকারীদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণের জবাব সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো শান্তি আলোচনা শুরু করবে না। বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চতুর্থ দিনের মতো চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয়পক্ষই আগ্রাসন বজায় রেখেছে, ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই তীব্রতা ভবিষ্যতে একটি বড় আকারের যুদ্ধের সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, ইরান মধ্যস্থতাকারী কাতার ও ওমানকে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে যে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জবাবদিহিমূলক প্রতিক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের “গুরুতর আলোচনা” করা হবে না। ইরান সরকারের ভাষ্যে, আক্রমণের মুখে অবস্থানরত কোনো রাষ্ট্র শান্তি আলোচনা করতে পারে না, এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আলোচনাও তাদের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকালে ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালায়। এই অভিযানে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা নিহত হন এবং দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এরই জবাবে ইরানও পাল্টা আক্রমণে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি আগ্রাসন পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন উত্তেজনায় ঠেলে দিয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংশ্লিষ্ট ইরানি কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরানকে ঘিরে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে—যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দেশটি নাকি কাতার ও ওমানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবারও পারমাণবিক ও যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে চেয়েছে—তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ভুল। তিনি এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তেহরান এখন কেবল ইসরায়েলের আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ওপরই মনোযোগী।
রয়টার্স এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কাতারের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ওমানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া চাইলেও তাদের কেউই এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য দেয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাত শুধু এ দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এটি গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলতে পারে। ইরানের কঠোর ভাষা ও প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিস্থিতি সহজে নিয়ন্ত্রণে আসবে না এবং আরও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
ঘটনার এই ধারা মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্গনে আরও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কাতার ও ওমানের মতো মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো চালিয়ে যাচ্ছে, তা এখন ইরানের অনমনীয় অবস্থানের কারণে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের মূল অবস্থান—“প্রতিক্রিয়া শেষ, তারপর আলোচনা”—এই বার্তাই আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও শান্তি প্রক্রিয়ার পথকে কঠিন করে তুলেছে।