প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
২৫০ জন হজযাত্রী নিয়ে জেদ্দা থেকে ভারতে আসার পথে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ ভয়াবহ কারিগরি ত্রুটির মুখে পড়ে, যা দেশটির বিমান চলাচল নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। রোববার ভোরে লখনউর চৌধুরী চরণ সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিমানের চাকার অংশ থেকে ধোঁয়া ও আগুনের ফুলকি দেখা যায়। এতে একদিকে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল ব্যবস্থার প্রস্তুতি ও দক্ষতা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ে।
ইন্ডিয়া টুডের বরাতে জানা যায়, ফ্লাইট নম্বর এসভি-৩১১২ যুক্ত বিমানটি শনিবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে যাত্রা শুরু করে এবং রোববার সকালে ৬টা ৩০ মিনিটে লখনউ বিমানবন্দরে পৌঁছায়। অবতরণের পরপরই বিমানের বাম পাশের চাকার নিচে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও আগুনের ফুলকি দেখা যায়, যা পরিষ্কারভাবে যান্ত্রিক ত্রুটির ইঙ্গিত দেয়।
বিমানবন্দরের জরুরি সাড়া টিম ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই ফেনা ও পানি ব্যবহার করে আগুন এবং ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে আনে। এই দ্রুত পদক্ষেপের ফলে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি এবং বিমানের সব যাত্রী নিরাপদে ও সুশৃঙ্খলভাবে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। যদিও কেউ আহত হননি, তারপরও নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট রানওয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয় এবং উড়োজাহাজটির পূর্ণাঙ্গ কারিগরি পরিদর্শন শুরু হয়েছে।
পরবর্তীকালে তদন্তে জানা যায়, বিমানের চাকার অ্যাসেম্বলিতে হঠাৎ করে হাইড্রলিক তরল পদার্থ (হাইড্রলিক ফ্লুইড) লিক করায় অতিরিক্ত উত্তাপ সৃষ্টি হয়। এই তাপই ধোঁয়া ও ফুলকি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়; বরং রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি ও পূর্বপ্রস্তুতির অভাবেরই ফল। তারা সতর্ক করছেন, যদি এই ত্রুটিটি উড্ডয়নের সময় ধরা পড়ত, তাহলে তা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় রূপ নিতে পারত।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগেই ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ শহরের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে। ওই ঘটনায় উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জন নিহত হন, সঙ্গে মাটিতে থাকা আরও ২৯ জনের মৃত্যুও ঘটে। এমন প্রেক্ষাপটে সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানে এ ধরনের কারিগরি ত্রুটি নতুন করে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সৌদি এয়ারলাইন্স এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে বিশেষজ্ঞ ও যাত্রী সুরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিমান সংস্থাগুলোর উচিত আরও কঠোর রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা অনুসরণ করা এবং প্রতিটি ফ্লাইটের পূর্বে পূর্ণাঙ্গ কারিগরি নিরীক্ষা নিশ্চিত করা।
যদিও সৌভাগ্যক্রমে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে যাত্রীদের মনে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের আতঙ্কের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। যাত্রী সুরক্ষা এবং আকাশপথে যাতায়াতের নিরাপত্তা প্রশ্নে এই ঘটনা ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাগুলোর জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।