শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

ইরানের সেনাপতি বাঘেরির হত্যাকাণ্ড: মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণমুখী উত্তেজনা, বিশ্ব কি বৃহৎ যুদ্ধে ধাবিত হচ্ছে?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
  • ৩১ বার

প্রকাশ: ১৩ই জুন, ২০২৫ • আজকের খবর ডেস্ক • আজকের খবর অনলাইন

ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা, চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল মোহাম্মদ হোসেইন বাঘেরির হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্য ও বৈশ্বিক কূটনৈতিক অঙ্গনে এক অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনা শুধু একটি দেশের নেতৃত্বে আঘাত নয়, বরং তা এক বৃহৎ ভূরাজনৈতিক সংঘাতের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে। বাঘেরির এই হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলের একটি নিখুঁত ও সমন্বিত হামলার ফল বলে দাবি উঠেছে, যেখানে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

ঘটনার সময় ইরান ও গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ছিল চরম উত্তেজনাপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের দূতাবাসগুলোতে আংশিক কর্মী প্রত্যাহার করে, সামরিক ঘাঁটিগুলিতে উচ্চ সতর্কতা জারি করে এবং ইসরায়েল নিজেদের দেশে ‘স্টেট অব ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করে। তাদের সকল শীর্ষ নেতৃত্বকে আন্ডারগ্রাউন্ড নিরাপত্তা জোনে সরিয়ে নেওয়া হয়। স্কুল, কলেজ, পাবলিক সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ইরান যদি তড়িঘড়ি করে পালটা হামলায় যায়, তাহলে কৌশলগতভাবে বড়সড় ফল পাবে না—এমন মতামত প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। বরং এক সপ্তাহ সময় নিয়ে পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলি নেতৃত্বের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং হয়তো তাদের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করবে।

তবে এ ঘটনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, কীভাবে এত সুরক্ষিত অবস্থানে থাকা একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার অবস্থান ও গতিবিধি ইসরায়েলের কাছে পৌঁছাল? এটিকে কেবল একটি বাহ্যিক হামলা হিসেবে না দেখে, ভেতরের কোনো ষড়যন্ত্র, ইনসাইড জব বা স্যাবোটাজ হিসেবেও দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটা ব্যর্থ হওয়াও এক বিশাল প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘপথ অতিক্রম করে পরিচালিত এই হামলা রাডারে ধরা পড়েনি, এমনকি ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের প্রতিক্রিয়াও ছিল না বললেই চলে। সম্ভাবনা রয়েছে যে, ইসরায়েল সাইবার হামলার মাধ্যমে ইরানের রাডার ইউনিট ও প্রতিরক্ষা সিস্টেম অকার্যকর করে দিয়েছিল।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলায় সরাসরি সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করলেও, ইসরায়েলের পক্ষে এই মাত্রার একটি হামলা পরিচালনা করা মার্কিন গোয়েন্দা সহায়তা ছাড়া সম্ভব কি না—সে প্রশ্ন উঠছে প্রবলভাবে। মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, এটি ইসরায়েলের একক পদক্ষেপ হলেও বাস্তবতা ভিন্ন ইঙ্গিত দেয়। ইসরায়েলের এই সামরিক সাফল্য তাদের গোয়েন্দা সংস্থার সক্ষমতা যেমন প্রমাণ করে, তেমনি এটি ইঙ্গিত করে যে ইরানের ভেতরে একটি দুর্বলতা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পর পালটা প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ইরানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা। কোনো অবস্থাতেই তাদের উচিত হবে না মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করা, যা একটি ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার প্রতিক্রিয়ার পথ খুলে দিতে পারে। একাধিক দেশকে টার্গেট না করে শুধুমাত্র ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়া তৈরি করাই কৌশলগতভাবে নিরাপদ।

এই হামলার পর, ইরানের গোপনে অর্জিত ইসরায়েলি নথিপত্রের কার্যকারিতা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। যদি সেই গোপন তথ্য ব্যবহার করে কোনো উল্লেখযোগ্য পালটা প্রতিক্রিয়া ইরান দেখাতে না পারে, তবে তাদের গোপন মিশনের সফলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। বরং ভুল টার্গেট বা আগেভাগে আক্রমণ করলে ইরানের দুর্বলতা আরও প্রকাশ পাবে এবং তা তাদের আঞ্চলিক নেতৃত্বের দাবিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচল সীমিত হওয়ায় সরবরাহ শৃঙ্খলায় বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। আরেকটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত উঠে এসেছে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ নিয়ে। যদি ইরানের পালটা প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য সামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়, তবে ইসরায়েল বা তার মিত্ররা ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে—এমন সম্ভাবনা এখন আর পুরোপুরি অস্বীকার করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধেও পারমাণবিক মোড় নেওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। রাশিয়াও এই পরিস্থিতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউক্রেনে একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

এইসব প্রেক্ষাপটে, বিশ্ব আবারও এক বৃহৎ আঞ্চলিক সংঘাতের প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে, যা দ্রুতই বৈশ্বিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক প্রজ্ঞা, সামরিক সংযম এবং বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনই এখন মানবসভ্যতার সামনে একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫