প্রকাশ: আজকের খবর অনলাইন | তারিখ: ৩০ মে ২০২৫ |
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ। রাজধানী ঢাকায় একদিনে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমে ঢাকার মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, এই বৃষ্টিপাতের মূল কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া একটি গভীর নিম্নচাপ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই নিম্নচাপের প্রভাবে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলবর্তী জেলা ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
এছাড়াও নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। তার আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল, যা সেসময় পর্যন্ত ছিল মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং নিম্নচাপ আরও কিছু সময় সক্রিয় থাকতে পারে।
চাঁদপুরে গত একদিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪২ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ১৭৯, ফরিদপুরে ১৭১, চট্টগ্রামে ১৬৪, নারায়ণগঞ্জে ১৬১, মাদারীপুর, ফেনী ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১৬০ মিলিমিটার করে, বরিশালে ১৪১, রাঙামাটিতে ১৪০, কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ১৩১, মানিকগঞ্জের আরিচায় ১১৯, বান্দরবানে ১১৩, বগুড়ায় ১১২ এবং নেত্রকোণায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের প্রায় সব জেলায়ই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই গভীর নিম্নচাপটি মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ হিসেবে সৃষ্টি হয়। এটি ধাপে ধাপে ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, এরপর নিম্নচাপ এবং অবশেষে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে এটি নিম্নচাপের রূপ নেয় এবং রাতের মধ্যেই তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।
এই নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার দেশের ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
শুক্রবার সকাল ৯টায় ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, স্থল নিম্নচাপটি তখন টাঙ্গাইল ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত নিম্নচাপটি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া অব্যাহত রাখবে।
নিম্নচাপের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা। এতে সাগরে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সতর্কবার্তায় আরও জানানো হয়, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের বাকি অঞ্চলেও ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এইসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জুন মাসের শুরুর দিকেই বর্ষা প্রবেশ করতে পারে। এর আগে এমন একটি গভীর নিম্নচাপ এবং এর প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টির অংশ হিসেবে ধরা যাচ্ছে। তবে একটানা অতিভারি বর্ষণের কারণে নগরজীবনে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি সেবা সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে কৃষি, মৎস্য ও পরিবহন খাতেও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে, কারণ নিম্নচাপটি দুর্বল হলেও এর প্রভাব পুরোপুরি কাটতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর পরবর্তী তথ্য না দেয়া পর্যন্ত সকলকে সতর্ক থাকার এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে।