প্রকাশ: ৩০শে মে ২০২৫
ঢাকা: আগামী অর্থবছরে স্টিল পণ্য, বিশেষ করে রডের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে বলে শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্টিল পণ্যের আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৪০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এছাড়া বিদ্যমান ফিক্সড আমদানি শুল্ক বাতিলেরও প্রস্তাব রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে স্টিলের মূল কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানিতে প্রতি টনে ১ হাজার ৫০০ টাকা ফিক্সড শুল্ক আদায় করা হয়। অন্যদিকে স্টিল থেকে বিলেট ও রড উৎপাদনে প্রতি টনে ফিক্সড ভ্যাট ধার্য রয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকা। সবমিলিয়ে সরকার প্রতি টনে ৩ হাজার ৭০০ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। প্রস্তাবিত কর কাঠামো বাস্তবায়ন হলে এই পরিমাণ বেড়ে ৫ হাজার টাকা বা তার বেশি হতে পারে।
এনবিআরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বর্তমানে বাজারে প্রতি টন রডের দাম প্রায় ৯০ হাজার টাকা। এনবিআর প্রতি টনে মাত্র ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে, যেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের হিসাবে এই পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল প্রায় ৫ হাজার টাকা। ফলে আমরা মনে করছি, সরকার এই খাতে সঠিক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য কর কিছুটা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
তবে শিল্পসংশ্লিষ্টরা এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশ স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, “সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প কমে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্টিল ও রডের চাহিদা কমেছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ। কর যদি এত বেশি হারে বাড়ানো হয়, তা এই খাতের জন্য বিপর্যয়কর হবে।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “এত বেশি হারে ভ্যাট ও এআইটি বাড়ানো হলে দাম বেড়ে যাবে, তাতে সাধারণ ভোক্তার কেনা কমে যাবে। ফলে ব্যক্তি, বেসরকারি খাত ও আবাসন খাতে চাহিদা কমবে – যা আরেক দফা এই খাতে হুমকির মুখে ফেলবে।”
বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল লিমিটেডের (বিএসআরএম) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্তও একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “নির্মাণ খাত এখন কঠিন সময় পার করছে। এভাবে ঢালাও কর বাড়ানো হলে ভোক্তার খরচ বেড়ে যাবে প্রতি টনে ১ হাজার টাকার বেশি।”
শিল্প বিশ্লেষকরা জানান, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু স্টিল ব্যবহার এখনও অনেক কম। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু স্টিল ব্যবহার প্রায় ৫৫ কেজি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৯৫ কেজিতে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। অন্যদিকে ভারতে মাথাপিছু স্টিল ব্যবহার ৯৩.৪ কেজি, জাপানে ৪৩২.৫ কেজি ও যুক্তরাষ্ট্রে ২৬৬.৩ কেজি।
বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তথ্যমতে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের স্টিল উৎপাদন প্রায় ৬৪ শতাংশ বেড়ে ৯০ লাখ টনে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কর কাঠামো চূড়ান্ত করতে আরও কয়েক দফা আলোচনা করা হবে। তবে শিল্পসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, কর বৃদ্ধি স্টিল শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভোক্তাদের জন্য নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেবে।