শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

মৎস্য অধিদপ্তরে ‘দ্বিমুখী নীতি’র অভিযোগ: ফেসবুক রিঅ্যাক্টে শোকজ, কিন্তু সরকার সমর্থনে মিছিলে জড়িতরা অব্যাহতি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
  • ১০৬ বার

[নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা, ১৭ মে ২০২৫] — মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ অধিদপ্তরে একাধিক কর্মকর্তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক প্রশাসনের ‘দ্বিমুখী নীতি’ ও ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব’য়ের নতুন অভিযোগ তৈরি করেছে। গত ১৪ এপ্রিল সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে মৎস্য অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তাকে ‘প্রশাসনিক শিষ্টাচার পরিপন্থী’ আচরণের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই একই প্রতিষ্ঠানের চার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যারা গত ৪ আগস্ট ২০২৪ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে রাস্তায় মিছিল ও সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তাদের কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়েছেন, কেউ বা বিতর্কিত প্রকল্পে রয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত: সাংবাদিকের পোস্ট ও শোকজ
গত ১৪ এপ্রিল, সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক পেজে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্বে) মো. তোফাজ্জেল হোসেনের পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেন। পোস্টে দাবি করা হয়, তোফাজ্জেল হোসেন আওয়ামী লীগের দুই মন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ফরিদা আখতার তার পদোন্নতির জন্য ‘ডিও লেটার’ (দপ্তরীয় আদেশ) দিয়েছেন।

ওই পোস্টে কিছু কর্মকর্তা ‘স্যাড’ রিঅ্যাক্ট দিলে মৎস্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক শিষ্টাচার পরিপন্থী’ আচরণের অভিযোগ এনে শোকজ নোটিশ জারি করেন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, এই নোটিশ প্রক্রিয়ার পেছনে সচিব তোফাজ্জেল হোসেন এবং উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের একান্ত সচিব আবু নঈম মোহাম্মদ আব্দুস সবুরের ভূমিকা রয়েছে।

শোকজ দেওয়া কর্মকর্তাদেরই সরকার সমর্থনের রেকর্ড
জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তোলেন, “যে কর্মকর্তারা শোকজ স্বাক্ষর করছেন, তাদেরই কি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ইতিহাস মন্ত্রণালয় বা উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানেন?” এ প্রসঙ্গে তিনি চার কর্মকর্তার নাম ও ভূমিকা উল্লেখ করেন:

১. ড. মো. আব্দুর রউফ (বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক)
অভিযোগ: ৪ আগস্ট ২০২৪, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মৎস্য অধিদপ্তরে একটি ‘শান্তি সমাবেশ’ আয়োজন করেন। ভিডিও প্রমাণে দেখা যায়, তিনি ও অন্যান্য কর্মকর্তা “শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই” স্লোগান দিচ্ছেন।

বর্তমান অবস্থান: সমাবেশের পর তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়। তিনিই সাম্প্রতিক শোকজ নোটিশ স্বাক্ষর করেছেন।

২. এস. এম. রেজাউল করিম (পরিচালক, প্রশাসন)
অভিযোগ: দিনাজপুরে কর্মরত থাকাকালীন আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতেন। ফেসবুকে শেখ হাসিনা, রেহানা ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের গুণগান করে পোস্ট দিতেন।

বিতর্ক: তার আমলে মৎস্য অধিদপ্তরে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ব্যাপক আয়োজনে পালিত হতো। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তদন্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

৩. জিল্লুর রহমান (সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক)
অভিযোগ: ৪ আগস্টের সমাবেশে সক্রিয় ছিলেন। সমাবেশের পর তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়েছিল, কিন্তু পরে সরিয়ে আব্দুর রউফকে দেওয়া হয়।

বর্তমান অবস্থান: অধিদপ্তরেই অন্য দায়িত্বে রয়েছেন।

৪. মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী (অতিরিক্ত মহাপরিচালক)
অভিযোগ: ৪ আগস্টের সমাবেশের অন্যতম সংগঠক। তার তত্ত্বাবধানে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্প থেকে ২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অডিট রিপোর্টে এই অনিয়ম ধরা পড়েছে।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
জুলকারনাইন সায়েরের প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোতে উঠে এসেছে:

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার তোফাজ্জেল হোসেনের পদোন্নতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন বলে অভিযোগ।

তার একান্ত সচিব আবু নঈম মোহাম্মদ আব্দুস সবুর শোকজ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন।

কিন্তু, যারা সরকারের পক্ষে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রতিক্রিয়া ও দাবি
সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের বলেন, “এটা চরম selective justice। ফেসবুক পোস্টে ‘স্যাড’ রিঅ্যাক্ট দিলে শাস্তি, কিন্তু সরকারের পক্ষে মিছিল করলে পদোন্নতি?”

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “রাজনৈতিক আনুগত্য যাচাইয়ের নামে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ধ্বংস করা হচ্ছে।”

মৎস্য অধিদপ্তরের একজন জুনিয়র কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “আমরা ভয়ে আছি। সামান্য মতপ্রকাশ করলেই শাস্তি পাবো, কিন্তু দলীয় লোকেরা যা খুশি করতে পারছে।”

মন্ত্রণালয়ের অবস্থান
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বা উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এখনো এই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। তবে, মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র দাবি করেছে, “শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য, রাজনৈতিক কারণে নয়।”

আগামী পদক্ষেপের দাবি
সরকারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করায় শাস্তি দেওয়া হলেও সরকার সমর্থনে মিছিল করা কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে। ফরিদা আখতারের উচিত এই দ্বিমুখী নীতির ব্যাখ্যা দেওয়া।

এই ঘটনা প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতিকে আবারো উন্মোচন করেছে। সরকার যদি এই অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত না করে, তাহলে এটি একটি বিপজ্জনক প্রিসেডেন্ট তৈরি করবে, যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা শুধুমাত্র দলীয় আনুগত্য দেখিয়েই দায়মুক্তি পাবেন। তাই দুর্নীতির অভিযোগে জড়িতদের দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫