প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, যিনি নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ইউরোপের মাঠে ইতিহাস গড়েছেন, বর্তমানে সৌদি আরবেই স্থায়ীভাবে বসবাসের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। নানা গুঞ্জনের মধ্যে যখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ কিংবা লাতিন আমেরিকার সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছিল, তখন সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি নিজেই জানালেন—সৌদি আরবই এখন তাঁর ঘর, এখানেই কাটাতে চান জীবনের বাকি সময়।
সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল নাসরের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের পর ক্লাবটির ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে রোনালদো তাঁর আবেগ, পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা খোলামেলা ভাবে তুলে ধরেন। পর্তুগিজ এই সুপারস্টার বলেন, “সৌদি আরব এক শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানে আমি ও আমার পরিবার নিজেদের একেবারে ঘরের মতোই মনে করি। সৌদি মানুষ আমাদের যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা দিয়েছে, তা আমরা গভীরভাবে অনুভব করেছি। এ কারণেই আমরা আমাদের জীবন এখানেই কাটাতে চাই।”
গত ২৫ জুন রোনালদো আল নাসরের সঙ্গে আরও দুই বছরের নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। ফলে, ৪২ বছর বয়সেও তাঁকে দেখা যাবে সৌদি প্রো লিগের মাঠে। চুক্তি অনুসারে তিনি বছরে আয় করবেন প্রায় ১৮৮ মিলিয়ন ইউরো, যার দৈনিক হিসেবে পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা—যা বিশ্ব ফুটবলের বেতন কাঠামোয় এক রেকর্ড।
তবে অর্থ নয়, রোনালদোর ভাষ্যে প্রাধান্য পেয়েছে স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রত্যাশা। “গত মৌসুমের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট নই। তবে অতীত পেছনে ফেলতে চাই। ক্লাব, সতীর্থ ও সমর্থকদের ওপর আমার আস্থা আছে। এবারের মৌসুম আমাদের জন্য সেরা হবে। আমি এখনও বিশ্বাস করি—সৌদি আরবেই আমি চ্যাম্পিয়ন হবো,” বলেন রোনালদো।
তিনি আরও জানান, ক্লাব বিশ্বকাপ খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন কয়েকটি শীর্ষ ক্লাব থেকে। কিন্তু নিজেকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে সেসব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। “আমার বিশ্রামের প্রয়োজন। সামনে দীর্ঘ মৌসুম আছে। এরপরই রয়েছে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ। আমি জাতীয় দলের জন্যও নিজেকে প্রস্তুত রাখতে চাই,” জানান পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী এই তারকা।
আল নাসরের হয়ে ইতোমধ্যে আড়াই বছর খেলেছেন রোনালদো। এই সময়ে তিনি ১০৫টি ম্যাচে মাঠে নেমে ৯৩টি গোল করেছেন, যা তার বয়স বিবেচনায় এক বিস্ময়কর রেকর্ড। তবে এখনও লিগ শিরোপা অধরাই রয়ে গেছে। নতুন চুক্তির মাধ্যমে তিনি শুধু সময় বাড়াননি, বাড়িয়েছেন লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতির গভীরতাও। তাঁর দৃষ্টিতে আল নাসর এখন শুধুই একটি ক্লাব নয়—বরং এক আবেগ, এক ভবিষ্যৎ, এবং তার ফুটবল-পরবর্তী জীবনেরও অনিবার্য অংশ।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা রোনালদো ভক্তদের কাছে এই ঘোষণাটি যেমন আবেগের, তেমনি সৌদি ফুটবলের জন্যও এক বড় অর্জন। রোনালদোর মতো একজন কিংবদন্তি শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও সৌদি আরবকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চে নতুনভাবে উপস্থাপন করছেন।
ফুটবলবিশ্ব তাই এবার তাকিয়ে রইল—৪০ পেরোনো এক কিংবদন্তি, যিনি প্রমাণ করতে চান বয়স নয়, আত্মবিশ্বাসই শেষ কথা। সৌদির মরুভূমিতে এবার তাঁর লক্ষ্য শুধুই গোল নয়, গোলপোস্টের বাইরেও ইতিহাস গড়া।