প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যের পারমাণবিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকা ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাকে ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। বিশ্বখ্যাত উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস সম্প্রতি ফোর্দো এলাকায় তোলা স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক নির্মাণকাজ চলছে। ২৯ জুন ধারণকৃত ওই চিত্রে একাধিক ভারী যন্ত্রপাতি—যেমন খননযন্ত্র ও ক্রেনের উপস্থিতি চিহ্নিত করা গেছে। সেইসাথে নতুন একটি রাস্তা নির্মাণের প্রমাণও মিলেছে, যা ঘটনাস্থলে প্রবেশ ও সংযোগকে সহজতর করে তুলছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নির্মাণকাজ নিছক অবকাঠামো উন্নয়ন নয়—বরং সাম্প্রতিক মার্কিন হামলার ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা, রেডিওলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ এবং সম্ভাব্য পুনর্গঠনের প্রস্তুতির অংশ হতে পারে। ২৮ জুনের আগের উপগ্রহচিত্র পর্যালোচনা করে পরমাণু অস্ত্র ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডেভিড অ্যালব্রাইট জানান, ঘটনাস্থলে যে ধরনের কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে তা শুধুই নির্মাণের নয়, বরং সম্ভাব্য পুনর্গঠন ও পুনর্মূল্যায়নের ইঙ্গিত বহন করে।
উল্লেখ্য, এটি সেই ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাই, যেটিকে লক্ষ্য করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাঙ্কার-ব্লাস্টার বোমা দিয়ে হামলা চালায়। এই হামলার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তারা ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোকে “ধ্বংস” করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই হামলা ইরানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে “দশকখানেক পিছিয়ে দিয়েছে”।
অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা “গুরুতর”, তবে এখনও পর্যন্ত তারা সেই ক্ষতির বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। একদিকে ইরান যখন এ বিষয়ে সচেতনভাবে মিতব্যয়ী বক্তব্য দিচ্ছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলছে, এই হামলার পর ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে।
তবে, এই ঘটনার মধ্যেই আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে সক্ষম হতে পারে। তাঁর এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কারণ এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাকে ঘিরে যে কর্মকাণ্ড চলছে, তা ভবিষ্যতের ভূরাজনীতিতে ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে উত্তেজনার নতুন অধ্যায় সূচিত করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইরানের অভ্যন্তরীণ শক্তিমত্তা এবং আন্তর্জাতিক চাপের জটিল ছক এখন এক অজানা সমীকরণ তৈরি করছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাওয়া নির্মাণের গতি ও ধরন সেই সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যার ফলাফল কতটা বিস্তৃত হবে, তা সময়ই বলে দেবে।