প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক
আজকের খবর অনলাইন
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (বিএসপিআই) এলাকার একটি মসজিদের পাশে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাতটি পরিত্যক্ত দোকান সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে। সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, দুপুরের দিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন নৌবাহিনীর দমকল বাহিনীর সদস্যরাও। স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিএসপিআই-এর শিক্ষার্থীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেন। দমকল বাহিনীর প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুড়ে যাওয়া দোকানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকলেও সেগুলোতে সংরক্ষিত কিছু আসবাবপত্র, কাঠের অবকাঠামো এবং ব্যবসায়িক সামগ্রী মজুত ছিল বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আগুনে এসব সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, এই অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ৩ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। যদিও কেউ হতাহত হয়নি, তবে সম্পদের এই ক্ষতি স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বিএসপিআই-এর অধ্যক্ষ রূপক কান্তি বিশ্বাস বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানের সীমানা ঘেঁষা দোকানগুলোতে হঠাৎ আগুন লাগে। এগুলো গত এক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। যদিও বর্তমানে দোকানগুলো ব্যবহৃত হচ্ছিল না, তবুও এমন আগুনের ঘটনা সবাইকে আতঙ্কিত করেছে। এটি কোনোভাবে যেন প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব না ফেলে, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।”
স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় বিস্তারিত তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো কীভাবে চালু ছিল এবং দোকানগুলোতে বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনা ঠিক কী অবস্থায় ছিল, তা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, পরিত্যক্ত দোকান হলেও সেগুলোর মধ্যে কিছু বৈদ্যুতিক তার ও সংযোগ বিদ্যমান ছিল, যেগুলো থেকে হয়তো শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানান। আগুন লাগার সময় আশেপাশের বসতবাড়িতে ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টে কিছু মানুষ সাময়িক অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আগুনের উৎস এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও পরিকল্পনা চলছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এই অগ্নিকাণ্ড আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, পরিত্যক্ত ভবন বা স্থাপনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ না করলে তা কিভাবে বড় ধরনের দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে। এলাকাবাসীর দাবি, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, কাপ্তাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও আলাদা করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।