প্রকাশ: ২৯শে জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা | আজকের খবর অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত অঞ্চলে আবারও রক্তক্ষয়ী সহিংসতার নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে আরও একজন ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী। চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যেই এই ঘটনা ইসরায়েলি বাহিনীর হতাহতের তালিকায় আরও একটি করুণ সংযোজন ঘটিয়েছে।
রোববার, ২৯ জুন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ জানায়, নিহত সেনার নাম ইস্রায়েল নাটান রোজেনফেল্ড। মাত্র ২০ বছর বয়সী এই তরুণ সার্জেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং ছিলেন ৬০১ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের সদস্য। একই সঙ্গে তিনি আকাবাত হা-বারজেল (৪০১) ডিভিশনের অংশ হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন। টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার উত্তরে একটি সামরিক অভিযানের সময় এই বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন।
আইডিএফ সূত্র মতে, রোজেনফেল্ড হলেন চলতি জুন মাসে গাজায় নিহত ২০তম ইসরায়েলি সেনা। এই সংখ্যা গত এক বছরে এক মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে সর্বোচ্চ হতাহতের রেকর্ড। এভাবে ধারাবাহিক প্রাণহানিতে সামরিক বাহিনীর ভেতরেও উদ্বেগ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা।
ইসরায়েলি আর্মি রেডিও আরও জানিয়েছে, মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতির পর সংঘর্ষ আবার শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ জন সেনা গাজায় নিহত হয়েছেন। তবে আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো—২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর শুরু হওয়া যুদ্ধপর্বে ইসরায়েলি সেনা নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৮০০ ছাড়িয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাদের মৃত্যুর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় গাজা উপত্যকার ওপর চালানো হচ্ছে অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা যায়, শুধু রোববার একদিনেই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই তখন ত্রাণ সংগ্রহের জন্য সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছিলেন বলে জানানো হয়।
বিস্ফোরণ এবং প্রাণহানির এই প্রবাহের মধ্যেই আইডিএফ উত্তর গাজার বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত গাজা শহর এবং তার আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। স্থানীয় অধিবাসীরা মনে করছেন, এটি ইসরায়েলের সম্ভাব্য আরেকটি বড় সামরিক অভিযানের পূর্বাভাস হতে পারে।
এই পরিস্থিতির ফলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও প্রকট হয়ে উঠছে। একদিকে ইসরায়েলের আগ্রাসী অভিযান, অন্যদিকে গাজার প্রতিরোধ বাহিনীর পাল্টা প্রতিক্রিয়া—দুই দিক থেকেই সহিংসতা বেড়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় নাগরিক হতাহতের সংখ্যা ও মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত এখন কেবল একটি রাজনৈতিক বা ভূরাজনৈতিক ইস্যু নয়; এটি এক মহামানবিক সংকটের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকটময় অঞ্চলটির দিকে নিবদ্ধ থাকলেও কার্যত কোনো টেকসই সমাধানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এই যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন নতুন করে লেখা হচ্ছে প্রাণহানির বেদনাময় অধ্যায়। গাজায় ফিলিস্তিনি শিশুদের কান্না, ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে যাওয়া পরিবার এবং তরুণ ইসরায়েলি সেনাদের কফিন—সব মিলিয়ে বিশ্ববাসীর চোখে এই অঞ্চল আজ সহিংসতার এক অন্ধকার গহ্বর। শান্তির প্রত্যাশা যতই দূরে ঠেলে যাক, মানবতার দায় থেকে বিশ্ব নেতাদের কার্যকর হস্তক্ষেপই এখন সবচেয়ে জরুরি।