শিরোনাম :
শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে, দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল উত্তরের অচেনা বিস্ফোরণ: লেবাননে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত ৩, আহত ১৩ কারামুক্তির পর পর্দায় ফেরার বার্তা: ‘জ্বীন-৩’ দিয়ে ফিরলেন নুসরাত ফারিয়া জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরে জাতীয় সমাবেশে জামায়াতের বার্তা: ৭ দফা দাবিতে বড় গণসমাবেশের প্রস্তুতি বাস রুট পারমিট নিয়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা, সিদ্ধান্তহীনতায় আরটিসি বরিশালে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অচল জনজীবন নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতি: পাকিস্তানে অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের পচনধরা লাশ উদ্ধার ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ হাতছাড়া, হতাশ মিরাজ জানালেন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পুনরায় মহাসংঘর্ষ: রিয়াল-পিএসজির দ্বৈরথে আজ ইতিহাস লিখবে কে?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজি: দুই লক্ষ কোটি টাকার রাত এবং মুসলিম বিশ্বের আত্মবিশ্বাসহীন বিভাজন

আজকের খবর ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ৪১ বার

প্রকাশ: ২৫শে জুন, ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক | আজকের খবর অনলাইন

যুদ্ধ কি কেবল কূটনীতি, প্রতিরক্ষা নীতি বা আঞ্চলিক আধিপত্যের খেলা? নাকি এটি একটি সূক্ষ্ম এবং সুসংগঠিত বিনিয়োগ, যেখানে প্রতিটি মিসাইল, প্রতিটি বোমা এবং প্রতিটি যুদ্ধবিমান হিসাব কষে ব্যবহৃত হয়—যার পেছনে থাকে জাতিগত, ধর্মীয়, এবং রাজনৈতিক লাভের এক দুর্ভেদ্য অঙ্ক?

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল যে সমন্বিত সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে ইরানের উপর, তা কেবল একটি প্রতিক্রিয়া নয়—বরং একটি কৌশলগত বিনিয়োগ, যার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ কোটি টাকা বলে ধারণা করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকরা। ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে, যেখানে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এই বিপুল অর্থব্যয়ের উদ্দেশ্য কী? এর ফলে আসলে কারা লাভবান হচ্ছে, কারা ক্ষতিগ্রস্ত?

উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্র অনুযায়ী, এই অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছে:

  • ‌৬টি B-2 স্টিলথ বোমারু বিমান, প্রতিটির দাম প্রায় ২৪,০০০ কোটি টাকা, মোট মূল্য দাঁড়ায় ১,৪৪,০০০ কোটি টাকা;

  • ‌৬টি বাংকার ব্লাস্টার বোমা, যেগুলোর মূল্য প্রতি ইউনিট প্রায় ৬০০ কোটি টাকা—মোট ৩৬০০ কোটি টাকা;

  • ‌৩০টি টমাহক ক্রুজ মিসাইল, প্রতিটির দাম ২০ কোটি টাকা—মোট ৬০০ কোটি টাকার সমতুল্য।

এর সঙ্গে যোগ করতে হয় স্যাটেলাইট সাপোর্ট, সাইবার নিরাপত্তা, ফুয়েল, রাডার, অপারেশনাল স্টাফিং এবং অন্যান্য সামরিক-প্রযুক্তিগত সাপোর্ট—যার সম্মিলিত খরচ দুই লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছায়। এই বিপুল ব্যয়ের পুরোটা করেছে যুক্তরাষ্ট্র—ইসরায়েলকে রক্ষা করার ‘নীতিগত দায়’ থেকে।

এটা শুধুই একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং একটি স্পষ্ট বার্তা—যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৌশলগত মিত্রদের জন্য কতটা অগ্রাধিকার দিতে প্রস্তুত, কতটা আর্থিক ও সামরিক বিনিয়োগ তারা করতে রাজি। এটি একই সঙ্গে ইহুদি-ধর্মীয় ও জাতিগত সংহতির বহিঃপ্রকাশ, যেখানে ‘মিত্র দুর্বল হলে আমিও দুর্বল’—এই বোঝাপড়াটি সুগভীরভাবে প্রোথিত।

এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম বিশ্ব যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত এক বাস্তবতায়। যেখানে ‘উম্মাহ’র ঐক্য কেবল আদর্শিক বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবতায় বিভক্তি ছড়ায় মাযহাব, মত, দল, ভূগোল ও ভাষার নামে। আমরা ব্যস্ত থাকি—কে শিয়া, কে সুন্নি; কার আক্বিদা ঠিক, কে ‘হক’, কে ‘মুনাফিক’; কে কোন ফিকহ মানে, কে ‘মুরতাদ’। আর এইসব আত্মঘাতী বিতর্কের ফাঁকে, ক্ষুধার্ত শিশুদের ওপর বোমা পড়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়, রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যেভাবে রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও গোষ্ঠীগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিকে প্রভাবিত করে, তার বিপরীতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো বারবার ধরা দেয় নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও দুর্বলতার কাছে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন কিংবা গাজা—প্রতিটি যুদ্ধক্ষেত্রেই মুসলিম রক্ত ঝরেছে, কিন্তু কখনোই গড়ে ওঠেনি একটি সম্মিলিত প্রতিরোধ বা ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন আসে—আমরা কবে জাগব?
এই প্রশ্ন এখন আর কেবল ধর্মীয় নয়, এটি রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রশ্ন। বিশ্ব যখন ক্রমশ বাণিজ্যিকীকৃত যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক অযোগ্যতা, রাষ্ট্রীয় দিশাহীনতা ও ধর্মীয় বিভাজন যেন নিজ হাতে নিজেদের পতনের পথ তৈরি করছে।

আজ প্রয়োজন একটি ‘গ্লোবাল ঐক্য ফ্রন্ট’—যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং কৌশলগত, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ঐক্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। যার লক্ষ্য হবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ রক্ষা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ভৌগলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তবে এই ফ্রন্ট গঠনের পথে প্রধান বাধা হলো—নিজেদের ভেতরকার বিভাজন। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্ব নিজেদের দিকেই আঙুল তুলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাইরের শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে আমাদের বিভ্রান্ত করবে, শোষণ করবে, ধ্বংস করবে।

ইতিহাস বারবার মুসলিম রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে—তবে এবার সেই ইতিহাস যেন আমাদের সম্মিলিত চেতনায় বাঁধা পড়ে, বিভক্তিতে নয়। এখনই সময় নতুন একতার ডাক দেয়ার, কারণ যদি আজ না জাগি—তবে ভবিষ্যত আমাদের আর জাগার সুযোগ দেবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫