প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫ | আজকের খবর ডেস্ক
ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলায় ইসরায়েলজুড়ে চলছে ধ্বংসের মাত্রা। গত কয়েকদিনের সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ থেকে ৩৫ জনে, আহত হয়েছেন শতাধিক, আর হাজারো পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের প্রথম দফার হামলায় ব্যাট ইয়ামের একটি আবাসিক ভবনে নিহত হন অন্তত নয়জন, যাদের মধ্যে পাঁচজন ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থী। ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় জরুরি সেবা সংস্থা এমডিএ নিশ্চিত করেছে, এ পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু ও ২০০ থেকে ৩০০ জন আহত হওয়ার খবর মিলেছে। তবে পাল্টা আক্রমণ ও চলমান সংঘাতের পরিস্থিতিতে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা শুধু প্রাণহানিতেই সীমাবদ্ধ নেই। ইউক্রেনীয় নাগরিক ও মেকআপ আর্টিস্ট তেতিয়ানা কুরাকোভা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও তার নতুন বাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন তিনি, তখনই বিস্ফোরণে বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হার্টজলিয়ায় স্কুলবাস ডিপোতে রকেট হামলায় অন্তত ১০টি স্কুলবাস সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, যদিও সেখানে কোনো শিক্ষার্থী না থাকায় বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো গেছে। রিশন লেইসিয়নে একটি বাসায় হামলায় দুজন নিহত ও বিশাধিক আহত হওয়ার খবরও নিশ্চিত করা হয়েছে।
শুধু আবাসিক এলাকা নয়, বাণিজ্যিক স্থাপনা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানও হামলার শিকার হয়েছে। রামাট গান ও তাম্রায় একাধিক ভবন সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, কয়েকশত ভবনে বড় ধরনের কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাড়ে তিনশো বাসিন্দাকে সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হলেও শতাধিক পরিবার এখনো গৃহহীন। হাইফার তেল পরিশোধনাগারে আগুন লাগার পাশাপাশি মার্কিন দূতাবাস ভবনেও আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তেল আবিবে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সামরিক ও বৈজ্ঞানিক স্থাপনাও এই হামলার বাইরে নেই। রিহোভোতে অবস্থিত ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের গবেষণাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া একাধিক সামরিক অফিস ও কমান্ড সেন্টারে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
এই সংঘাতের প্রভাব কেবল ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতেই সীমাবদ্ধ নেই, বৈশ্বিক স্তরেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জি৭ নেতারা সংঘাত প্রশমনের জন্য জোরালো আহ্বান জানালেও, ইসরায়েলি জনমনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আয়রন ডোম ও অ্যারো মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা এই সংকটে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই সংঘাতের ফলে ইসরায়েলে মানবিক ও অবকাঠামোগত বিপর্যয় ঘটেছে। হাজারো পরিবারের বসতভিটা ধ্বংস হয়েছে, গবেষণা ও কূটনৈতিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ ও শান্তি প্রচেষ্টা এখন সময়ের দাবি। এই ধ্বংসযজ্ঞ শুধু ইসরায়েলই নয়, সমগ্র মানবতার জন্য একটি বেদনাদায়ক অধ্যায় হয়ে থাকবে, যদি না দ্রুত সংঘাতের অবসান ঘটে।