প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৫ • আজকের খবর অনলাইন
আজ শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের পার্ক লেনের হোটেল ডোরচেস্টারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকটি শুরু হবে শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের সময় সকাল ৯টায়, যা বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী দুপুর ২টা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে আগামী জাতীয় নির্বাচন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার বিষয়টি। বিশেষ করে, নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী পক্ষের অবস্থান, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও দেশব্যাপী সুশাসন নিশ্চিতকরণ ইস্যুগুলো এই বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চারদিনের সরকারি সফরে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১০ জুন, মঙ্গলবার, তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এরপর থেকে তিনি ব্রিটিশ রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। সফরের অংশ হিসেবে তারেক রহমানের সঙ্গে আজকের বৈঠকটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ঈদের ঠিক আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচির ঘোষণা দেন। তবে এই প্রস্তাবের সঙ্গে এখনো একমত হয়নি বিএনপি। দলটি নির্বাচন ডিসেম্বরেই আয়োজনের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। এই ভিন্নমতের প্রেক্ষাপটেই লন্ডনের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বসতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকটি হতে পারে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে একটি যৌথ পথরেখা নির্ধারণের সম্ভাব্য সূচনা। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিচারব্যবস্থায় সংস্কার, ‘জুলাই সনদ’-এর ভবিষ্যত, এবং জাতির সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান মনে করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা যে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত তা যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়, সে বিষয়ে বিএনপি ও সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি। তার মতে, যদি উভয় পক্ষ দায়িত্বশীলতা দেখায়, তবে এই সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব।
অপরদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, এই বৈঠককে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জায়গা না ধরে বরং একটি সূচনা হিসেবে দেখা উচিত। তিনি সতর্ক করে দেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্যে ফাটল ধরলে তা শত্রুদেশগুলোর জন্য সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। তাই রাজনৈতিক ঐক্য ও জাতীয় স্বার্থে একটি দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার পথ শুরু হওয়া জরুরি।
এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যকার আজকের বৈঠকটি শুধুমাত্র দুজন নেতার ব্যক্তিগত মতবিনিময় নয়, বরং এটি হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দৃশ্যপট রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে দেশবাসীকে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোটপ্রক্রিয়া এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি সম্ভাব্য রূপরেখা উদ্ভূত হতে পারে। এখন দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনেকটাই নির্ভর করছে এই বৈঠকের গতিপ্রকৃতি ও ফলাফলের ওপর।