প্রকাশ: ১২ই জুন, ২০২৫ • আজকের খবর ডেস্ক •
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ শহরে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২৪২ জন যাত্রী নিয়ে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয় বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
দেশটির জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ফ্লাইটটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে রওনা হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়ে এবং দ্রুত উচ্চতা হারিয়ে পাশ্ববর্তী খোলা জমিতে আছড়ে পড়ে। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ফায়ার সার্ভিস, উদ্ধারকারী দল, সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিট এবং মেডিকেল টিম। ঘটনাস্থলে প্রচণ্ড ধোঁয়া, আগুন এবং বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিমানে থাকা যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক হলেও কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও ছিলেন, যাঁরা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে কর্মসূত্রে বা শিক্ষা-উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটে থাকতে পারে। তবে বিস্তারিত তদন্তের জন্য ইতোমধ্যেই একটি উচ্চপর্যায়ের টিম গঠন করা হয়েছে এবং দুর্ঘটনার ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
ঘটনার পরপরই এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু সহ ভারতের প্রধান সব সংবাদমাধ্যম লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে ঘটনার আপডেট দিতে শুরু করে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দুর্ঘটনার ছবি ও ভিডিও, যেগুলোর অনেকগুলোই দৃষ্টিকটু এবং মর্মান্তিক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দুর্ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করে দ্রুত তদন্ত ও আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র জানান, ফ্লাইটে ২৪২ যাত্রীর সঙ্গে ৮ জন ক্রু সদস্যও ছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত ঠিক কতজন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কয়েকজন যাত্রীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বিমানটির সর্বশেষ মেইনটেনেন্স রিপোর্ট যাচাই করছে এবং যাত্রীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য একটি হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে।
আহমেদাবাদ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রক্তদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দিতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের মেডিকেল টিম একযোগে কাজ করছে। দুর্ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যেসব ব্রিটিশ নাগরিক ফ্লাইটটিতে ছিলেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করছে।
বিমানের প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা, মানবিক ভুল নাকি অন্য কোনো কারণ দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে—তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, যাত্রী নিরাপত্তা ও বিমান রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি কোনোমতেই অবহেলার জায়গা হতে পারে না। এই মুহূর্তে গোটা ভারত শোকগ্রস্ত এবং উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। পুরো দেশের দৃষ্টি এখন উদ্ধার অভিযান ও তদন্তের দিকে। সবার আশা, এই দুঃখজনক ঘটনার পূর্ণ সত্য শিগগিরই প্রকাশ পাবে এবং যারা এই দুর্ঘটনায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের উপযুক্ত সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।